বাংলাহান্ট ডেস্ক:- বন্যার ভয়াল রূপ কার্যত গ্রাস করেছে গোটা পাকিস্তানকে (Pakistan)। ইতিমধযেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গোটা দেশই। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ জুন থেকে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৮৫৪ জন মানুষের। আহত হয়েছেন প্রায় ১১০০ জন। ঘরছাড়া হয়েছেন ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। গত ৪০ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা (Flood) বলে মনে করছে পাক প্রশাসন। অসংখ্য গ্রাম জলের নিচে তলিয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার একর কৃষিজমির ফসল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ। শুধু এই অঞ্চলেই হড়পা বান ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪০৬ জন।
বন্যা বিপর্যস্ত পাকিস্তান (Pakistan)
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের (Pakistan) প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফের (Khwaja Asif) মন্তব্যে নতুন করে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দেশের মানুষের উচিত এই বন্যাকে আল্লাহর আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচনা করা। গোটা বিশ্বে জল সংকট তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তানে এই বন্যা আসলে আল্লাহর কৃপা। এটাকে বিপর্যয় বলা যায় না।” শুধু তাই নয়, তিনি বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্দেশে আরও বলেন, “সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ না করে জনগণের উচিত এই জল সঞ্চয় করা। বালতি বা পাত্রে ভরে ঘরে নিয়ে যান। এর ফলে পাকিস্তানের জল সমস্যার সমাধান হবে।”
আরও পড়ুন:- “প্রয়াত মায়ের অপমান”, কংগ্রেস-আরজেডির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মোক্ষম জবাব দিলেন মোদী
আসিফ স্বীকার করেন, সরকারের হাতে এখন কোনও বড় বাঁধ নির্মাণের মতো সামর্থ্য নেই। তাছাড়া বন্যা রুখতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিও তাদের হাতে নেই। তাই জনগণের উপরেই দায় চাপিয়ে দেন তিনি। তাঁর দাবি, “নদী তীরবর্তী অঞ্চলে জনগণ দখল করে বসতি গড়েছে। নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বদলে যাওয়ায় এই বন্যা অনিবার্য ছিল।” শয়ে শয়ে মানুষের মৃত্যুর মাঝেই এই বক্তব্য সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রশাসনের (Pakistan) ব্যর্থতা ঢাকতে জনগণের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন মন্ত্রী।
এদিকে আরেক পাক মন্ত্রী আহসান ইকবাল (Ahsan Iqbal) সরাসরি ভারতের (India) বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জল অস্ত্র ব্যবহার করছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের উচিত ছিল এই দুর্যোগকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করে আমাদের সঙ্গে মিলিতভাবে মোকাবিলা করা। কিন্তু তার পরিবর্তে তারা হঠাৎ প্রচুর জল ছাড়ছে, যার ফলে পাকিস্তান ডুবে যাচ্ছে।” যদিও সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, ভারতের পক্ষ থেকে নিয়ম মেনে প্রতিবার জল ছাড়ার আগে পাকিস্তানকে আগাম বার্তা পাঠানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন:-‘প্রয়োজনে বেতনের টাকা থেকে আইনি লড়াইয়ের খরচ দেব’, ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের পাশে শুভেন্দু
বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের (Pakistan) সাধারণ মানুষ সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের অভাবে তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। শয়ে শয়ে মানুষের মৃত্যু, ঘরছাড়া লক্ষাধিক পরিবার, এবং প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ পাকিস্তানকে এক গভীর মানবিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুর্যোগ সামলাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি, নইলে ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।