বাংলাহান্ট ডেস্ক: এশিয়ার আরও এক দেশে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ল। নেপালের পর এ বার ফিলিপিন্স (Philippines)। রাজধানী ম্যানিলায় (Manila) রবিবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথে নামলেন হাজার হাজার মানুষ। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের (Ferdinand Marcos Jr.) ইস্তফার দাবিতে সরব হলেন বিক্ষোভকারীরা। প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষও হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে এবং লাঠিচার্জে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০ জন নাবালক। ধৃতদের অভিযোগ, পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। অপরদিকে, বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত ৩৯ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ফিলিপিন্স (Philippines)
ফিলিপিন্স (Philippines) বরাবরই প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ঘন ঘন সাইক্লোন, বন্যা এবং অপ্রশাসিত নগরায়ণ দেশের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। রাজধানী ম্যানিলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রতি বছরই জলে ডুবে যায়। ২০২২ সালে ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়র আশ্বাস দিয়েছিলেন দুর্যোগ মোকাবিলায় জোরদার পদক্ষেপের। প্রায় ৯৫০ কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়েছিল জলাধার নির্মাণ, খাল খনন এবং নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের জন্য। কিন্তু সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নিজেই জানিয়েছেন, অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের। কোনও প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করা হলেও বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন:ভারতের কাছে ফের পরাজিত হয়ে নতুন অভিযোগ পাকিস্তানের! ICC-র কাছে জানানো হল নালিশ
রবিবারের বিক্ষোভ সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ছাত্র-যুবরা যেমন সামনের সারিতে ছিলেন, তেমনই যোগ দিয়েছেন নানা পেশার মানুষ, বামপন্থী সংগঠন থেকে শুরু করে ক্যাথলিক বিশপদের সংগঠনও। জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে ফিলিপিন্সে (Philippines) যেন নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সূচনা হয়েছে।
অনেকে মনে করছেন, নেপালের সাম্প্রতিক ছাত্র-যুব আন্দোলন থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন ফিলিপিন্সবাসী (Philippines)। উল্লেখ্য, নেপালে সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে আন্দোলন রূপ নেয় সরকার-বিরোধী বিদ্রোহে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বহু প্রাণহানির পর অবশেষে ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা।
আরও পড়ুন:ছিল না ব্যবসার কোনও পরিকল্পনা! শখপূরণ করতে গিয়েই এখন টাকার বৃষ্টি, অবাক করবে যশিকার কাহিনি
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালের পর এ বার ফিলিপিন্সেও (Philippines) দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন চরমে উঠেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়া এই জনবিক্ষোভ আসলে দুর্নীতি, দুর্যোগ মোকাবিলা ও শাসনব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতারই প্রতিফলন। প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়রের সরকার বিক্ষোভ দমনে আপাতত কঠোর অবস্থান নিলেও জনরোষ যে থামছে না, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে ম্যানিলার রাস্তায়।