ছিলেন মেজর ধ্যানচাঁদের শিষ্য, একক দক্ষতায় হারিয়েছিলেন হল্যান্ড দলকে! আজ দিন কাটে কুঁড়েঘরে

বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ভারতবর্ষ একটি বিচিত্র দেশ। বহু প্রতিভাবান মানুষ এখানে নিজের প্রতিভার যোগ্য কদর না পেয়ে তলিয়ে যান হতাশা বা দারিদ্রতার অতলে। বিশেষ করে ক্রীড়া জগতে এই ঘটনা দেখা যায় অত্যন্ত বেশি। পরিশ্রম করে নিজের প্রতিভার মাধ্যমে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন দেখেন অনেক ক্রীড়াবিদই। দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে যখন তারা দেখেন যে তাদের লক্ষ্যে তারা সফল হতে পারেননি তখন তাদেরকে কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়।

আজ আমাদের এই প্রতিবেদনে আমরা এমনই একজন হকি খেলোয়াড়ের কথা আলোচনা করব। এই বিশেষ খেলোয়াড় স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের মুখ উজ্জ্বল করার। কিন্তু বর্তমানে দিন কাটাচ্ছেন চরম দারিদ্র্যের কবলে। এই প্রাক্তন হকি খেলোয়াড়ের নাম টেকচাঁদ যাদব। ৮২ বছর বয়সী প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় থাকেন মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার ট্যাঙ্ক এলাকার একটি জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে।

অথচ তার জীবনটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। মেজর ধ্যানচাঁদের শিষ্য টেকচাঁদ ১৯৬১ সালে হল্যান্ডকে পরাস্ত করা ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন দুধ বিক্রেতা। বাবার কাছেই প্রাথমিক হকির পাঠ নেন তিনি। ছোটবেলায় গাছের ডাল দিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে হকি খেলতেন এবং তারই উৎসাহ দেখে তার বাবা পরবর্তীকালে তাকে আসল হকিস্টিক কিনে দিয়েছিলেন। নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে পরবর্তীকালে ডিস্ট্রিক্ট হকি অ্যাসোসিয়েশনের দলে খেলার সুযোগ পান তিনি। ভারতের বিভিন্ন বড় শহর গুলিতে একাধিক টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন টেকচাঁদ।

১৯৬০ সালে তিনি প্রথমবার হকির যাদুকর মনে পরিচিত মেজর ধ্যানচাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তার জেলায় তিন মাসের জন্য মেজর অবস্থান করেন এবং অনেক খেলোয়াড়দের টিপস দেন যা তাদের জীবন বদলে দেয়। এর এক বছরের মধ্যে তিনি ভারতীয় দলে সুযোগ পান এবং ভোপালে আয়োজিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্স করেন। কিন্তু তারপর তার বাবা মারা যাওয়ায় জীবিকার তাগিদে তাকে একটি বেসরকারি চাকরির সঙ্গে যুক্ত হতে হয়।

tek

জীবন সংগ্রাম তাকে ধীরে ধীরে হকির থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। পিকচারের সেই সময়কার মেডেল বা যাবতীয় সার্টিফিকেট ও আজ আর অক্ষত নেই, সবই খোয়া গিয়েছে। বর্তমানে তার কোন পরিবারও নেই। যে কুড়ে ঘরে তিনি বাস করেন তাতে তার ভাইয়েরা দুবেলা খাবার পাঠান এবং সেই খেয়েই কোনওক্রমে বেঁচে আছেন তিনি। বর্তমানে জনপ্রিয় হকি রেফারি মোহর সিংয়ের একসময়ের পরামর্শদাতা টেকচাঁদ। তিনি জানিয়েছেন যে তার খারাপ লাগে এক সময় প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা যাকে দেখলে কাঁপতে থাকতেন ভয়ে তার এই অবস্থা দেখে। সরকার তাকে যথাযথ সম্মান জানাক, এমনটা চান মোহর।


Reetabrata Deb

সম্পর্কিত খবর