কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নিতে আজও চার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রী, ব্রাত্য মমতা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ফের সামনে এলো কেন্দ্র-রাজ্য মন-কষাকষির চিত্র। একদিকে যখন কোভিড বাণে রীতিমতো জর্জরিত দেশ। ক্রমাগত পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে হাতের বাইরে। রোজই আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় তিন লাখেরও বেশি মানুষ। তখন রীতিমত আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গেও। গত ২৪ ঘন্টায় সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধু তাই নয় মৃত্যুর গড়ও বেশ বেশি এই রাজ্যে। ইতিমধ্যেই সংকটজনক রাজ্যগুলির তালিকাতেও উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের নাম। কিন্তু গত ১০ দিনে ১৮ জন মুখ্যমন্ত্রী ও দুজন উপ রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বললেও ফের একবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপেক্ষিতই থেকে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্যে নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে তৃতীয় বার ক্ষমতা দখলের পর প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনিক শুভেচ্ছাবার্তা পাননি তিনি। একথা সকলের সামনে নিজেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সে সময় তিনি নিজেই বলেন প্রধানমন্ত্রী হয়তো ব্যস্ত আছেন সেন্টিমেন্টে নিইনি।

তবে এই মুহূর্তে প্রশ্নটা রাজ্যের সার্বিক স্বার্থের। সে ক্ষেত্রে একদিকে যখন কোভিড রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে গোটা রাজ্য জুড়ে। তখনো কেন অগ্রাধিকার পাবে না পশ্চিমবঙ্গ সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আজ সকাল থেকে মোট চারজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রথমেই ফোন করা হয় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। টিকাকরণ, করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা, রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি, অক্সিজেন সরবরাহ সমস্ত কিছু নিয়েই তার কাছে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের কাছে।

তার পর পর ফোন পান ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল এবং পুদিচেরির নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী এন আর রঙ্গস্বামী। রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রত্যেকের কাছেই খোঁজ নেন তিনি। তাদের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে আশ্বস্তও করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এদিন উপেক্ষিত থেকে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেও কেন্দ্রের সঙ্গে একাধিকবার বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একের পর এক চিঠিও লিখেছেন তিনি। রাজ্যের অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো, জীবনদায়ী ড্রাগের উপর জিএসটি না বসানো, সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া ইত্যাদি নানা ইস্যুতে একাধিকবার সরব হয়েছেন মমতা। এমনকি সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন না দিলে ধরনায় বসানো ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তার এই সমালোচনায় উপেক্ষার কারণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।

এর আগে এই মাসের ৮ তারিখেও চারজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। সেদিন তার ফোন পেয়েছিলেন, মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, তামিলনাড়ুর নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন এবং হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর। সেদিনের মতোই আজও উপেক্ষার পাত্র হয়ে রইল রাজ্য। গত বিধানসভা নির্বাচনেই বিজেপির প্রচারে হালকা ইঙ্গিত ছিল সব সময় বিরোধিতা ঠিক নয়। কখনো কখনো রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্র-রাজ্য একই সরকার দরকার। কিন্তু জনগনের রায় গিয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য আলাদা সরকারের পক্ষেই। সেই জন্যই কি অভিমান প্রধানমন্ত্রীর? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। এই মুহূর্তে রাজ্যের পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সেই কারণে কোভিড যুদ্ধে কেন্দ্র রাজ্যের ঐকান্তিক সহযোগিতায় একান্ত কাম্য। এখন আগামী দিনে কি সমীকরণ তৈরি হয় সে দিকেই নজর থাকবে সকলের।.


Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর