বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতে বাড়ির মেয়েদের লক্ষ্মীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। বলা হয়, কন্যা সন্তান সংসারে সমৃদ্ধি আনে। কিন্তু সম্প্রতি এমন এক কন্যা সন্তানের কাণ্ডের কাহিনী সামনে এসেছে, যিনি সংসারে নামিয়ে এনেছেন অন্ধকার। তাঁর কাহিনী শুনে সবাই বলছে, ভগবান এমন সন্তান যেন কাউকে না দেন। এমন নৃশংস কাণ্ড ঘটিয়েছেন যে শুনলে শিউরে উঠবে যে কেউ। নিজের পরিবারের ৮ জন সদস্যকে খুন করেছেন নিজে হাতে (Poonia Murders)। বাড়িকে যেন একটি আস্ত শ্মশানে পরিণত করেছিলেন!
হরিয়ানার হিসারের একটি বড় বাংলোতে নিজের পরিবারকে নিয়ে থাকতেন বিধায়ক রেলু রাম পুনিয়া। রেলু রামের স্ত্রী কৃষ্ণা, ছেলে সুনীল, বৌমা, নাতি, নাতনি ও দুই মেয়ে প্রিয়াঙ্কা ও সোনিয়াকে নিয়ে থাকতেন তিনি। বিধায়ককে রাজ্যের ধনীতম ব্যক্তিদের মধ্যে ধরা হত। পরিবারকে সমস্ত সুযোগ সুবিধা ও বিলাসবহুল জীবন দিয়েছিলেন রেলু রাম। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন টিকল না। কে জানত, নিজের ঘরের লোকই একদিন পরিবারটিকে শেষ করে দেবে।
২৩ অগস্ট ২০০১ সালে রেলু রামের বাড়িতে তাঁর ছোট মেয়ে প্রিয়াঙ্কার জন্মদিনের পার্টি চলছিল। প্রিয়াঙ্কা হোস্টেলে থাকতেন। নিজের জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে এসেছিলেন। বড় মেয়ে সোনিয়াই সমস্ত কিছুর আয়োজন করেছিলেন। সকলেই আনন্দ করছিলেন। কিন্তু এই পার্টিই আসলে সোনিয়ার চক্রান্ত ছিল। পরিবারের রাতের খাবারে আফিম মিশিয়ে দিয়েছিলেন সোনিয়া। যা খেয়ে সকলে অচৈতন্য হয়ে পড়েন। সকলেই নিজেদের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
সোনিয়া বিবাহিত ছিলেন। ছোট থেকে খেলাধুলোয় মনোযোগী ছিলেন। বিয়েও করেন সঞ্জীব নামক এক জুডো খেলোয়াড়কে। রেলু রাম প্রথমে এই বিয়ের বিরোধীতা করলেও পরে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার জন্মদিনের দিনই স্বামীর সঙ্গে মিলে নিজের পরিবারকে শেষ করে দেন সোনিয়া। পরিবারের সদস্যরা যখন অচেতন অবস্থায় ছিলেন, তখন একটি লোহার রড নিয়ে আসেন সোনিয়া। বাবা রেলু রামের মাথায় ওই রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে খুন করেন। তারপর নিজের মায়ের ঘরে যান। সেখানে কৃষ্ণা দেবী তাঁর দু’বছরের নাতনির সঙ্গে ঘুমোচ্ছিলেন।
সোনিয়া ও সঞ্জীব মিলে তাঁদের দু’জনকেই রড দিয়ে খুন করেন। সঞ্জীবের কাছে একটি পিস্তল ছিল। সেটি দিয়ে পরিবারের বাকি সদস্যদের খুন করা হয়। সবাইকে মারার পর তাঁরা দেখেন, দু’জন শিশু রয়ে গিয়েছে। তাদেরকেও ছাড়েননি সোনিয়া ও সঞ্জীব। প্রচণ্ড নিষ্ঠুরভাবে দুই শিশুকেও হত্যা করেন তাঁরা। এরপর রেলু রামের বাড়িতে ছেয়ে যায় শ্মশানের নিস্তব্ধতা। এতগুলি খুন করে নিজে অক্ষত অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরোলে পুলিশ তাঁকে সন্দেহ করবে। তাই পুলিশকে ধোকা দিতে নিজেকেও আহত করে সোনিয়া।
পরদিন সকালে বাড়ির কাজের লোক আসে। তারা বাড়ির অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। চারদিকে রক্ত এবং সোনিয়া বাদে বাকি পরিবার মৃত। বিধায়ক রেলু রামের হত্যাকাণ্ড গোটা দেশেই চাঞ্চল্য ফেলে দেয়। পুলিশের তদন্তে অবশেষে ধরা পড়ে সোনিয়া ও সঞ্জীব। বাড়ির মেয়ে যে এমন কাণ্ড ঘটাবে তা কেউই ভাবতে পারেননি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সোনিয়াকে জেরা করতে শুরু করে পুলিশ। পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে নিজের দোষ কবুল করে নেয় সোনিয়া।
কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের পিছনে কী কারণ ছিল? জানা যায়, রেলু রামের দু’টি বিয়ে ছিল। সেই দু’টি বিয়ে থেকে জন্ম হয় সোনিয়া ও তাঁর ভাই সুনীলের। সোনিয়া ও সুনীলের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল। রেলু রামের ৫০ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি ছিল। এছাড়াও তেলের ব্যবসা ছিল তাঁর। সোনিয়া চাইতেন রেলু রাম কিছু জমি বেচে তাঁর স্বামীকে টাকা দিন। যাতে সঞ্জীব নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারে। কিন্তু সুনীল এর বিরুদ্ধে ছিল। তাই গোটা পরিবারকেই শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সোনিয়া ও সুনীল।
ক্ষোভ ও লোভের বশে সোনিয়া নিজের পরিবারকেও শত্রুর নজরে দেখতে শুরু করেছিলেন। জেলা আদালত সোনিয়া ও সঞ্জীবকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় সংশোধন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করে। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছলে সেটি আবার মৃত্যুদণ্ডেই সংশোধিত হয়। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট নিজেদের রায় সংশোধন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করে।