বাংলাহান্ট ডেস্ক: প্রিন্স শুক্লার অসাধারণ সফলতার (Success Story) কাহিনি অবাক করবে আপনাকেও।সাধারণত শহরের ঝলমলে জীবন ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসতে যুবসমাজের অনীহা থাকে। কিন্তু বিহারের পূর্ণিয়া জেলার ২৪ বছরের যুবক প্রিন্স শুক্লা সেই ধারণাই বদলে দিয়েছেন। বেঙ্গালুরুর একটি ভালো চাকরি ছেড়ে তিনি নিজের গ্রামে ফিরে এসে কৃষিভিত্তিক স্টার্টআপ ‘এগ্রেট’ (AGRATE) শুরু করেন। শুরুতে অনেকেই তাঁকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছিলেন, কেউ কেউ ‘গেঁয়ো’ বলেও কটাক্ষ করেন। কিন্তু সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে প্রিন্স প্রমাণ করেছেন, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কৃষিকেও সফল ও আকর্ষণীয় কেরিয়ার হিসেবে গড়ে তোলা যায়। আজ তাঁর সংস্থা বছরে প্রায় ২.৫ কোটি টাকার টার্নওভার করছে এবং লক্ষাধিক কৃষকের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
প্রিন্স শুক্লার অসাধারণ সফলতার (Success Story) কাহিনি:
পূর্ণিয়া জেলার একটি ছোট গ্রামে জন্ম প্রিন্স শুক্লার। ছোটবেলা থেকেই তিনি কৃষকদের দৈনন্দিন সংগ্রাম খুব কাছ থেকে দেখেছেন। বিএসসি অ্যাগ্রিকালচার শেষ করার পর তিনি বেঙ্গালুরুতে চাকরি শুরু করেন। বিদেশে মাস্টার্স করারও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনা লকডাউনের কারণে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং তাঁকে গ্রামে ফিরে আসতে হয়। গ্রামে ফিরে এসে তিনি দেখেন, কৃষকরা ভেজাল ও দামী বীজ, নিম্নমানের সার এবং পুরনো যন্ত্রপাতির সমস্যায় জর্জরিত। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে কৃষিকে নতুনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। বিদেশের স্বপ্ন ছেড়ে তিনি কৃষিকেই নিজের ভবিষ্যৎ হিসেবে বেছে নেন (Success Story)।
আরও পড়ুন:হাইকোর্টে নতুন মোড় নিল SSC মামলা! কোন চাকরপ্রার্থীদের ভাগ্য খুলছে?
মাত্র ১ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে একটি ছোট ঘর থেকেই প্রিন্স ‘এগ্রেট’ স্টার্টআপের সূচনা করেন। প্রথমদিকে কৃষকদের উন্নতমানের বীজ, জৈব সার ও আধুনিক কৃষিযন্ত্র সরবরাহ করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। তবে দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন, শুধু উপকরণ দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। তাই কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু করেন। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে তিনি ১০ হাজারের বেশি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। ভিডিও কল, কর্মশালা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বীজ বপনের সঠিক পদ্ধতি, জল সংরক্ষণ ও জৈব চাষের কৌশল শেখাতে শুরু করেন (Success Story)।
এই উদ্যোগের শুরুতে প্রিন্সকে নানা কটূক্তির মুখে পড়তে হয়। আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় মানুষের একাংশ তাঁর শহরের চাকরি ছেড়ে কৃষিতে ফেরাকে হাস্যকর বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু প্রিন্স দমে যাননি। তাঁর প্রশিক্ষণের ফলেই বহু কৃষক জানিয়েছেন, তাঁদের ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে এবং লোকসান কমেছে। ধীরে ধীরে এগ্রেট শুধু কৃষি উপকরণের জোগান নয়, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য ভালো বাজার সংযোগও তৈরি করে দেয় (Success Story)।

আরও পড়ুন:চার হাজারের টিকিট, ২০০ টাকার জল! যুবভারতীতে ১০০ কোটির ঘাপলার অভিযোগ, ED তদন্তের দাবি অর্জুন সিং-র
বর্তমানে এগ্রেট পূর্ণিয়া ছাড়িয়ে বিহারের একাধিক জেলায় কাজ করছে এবং বছরে প্রায় ২.৫ কোটি টাকার ব্যবসা করছে। আইটিসি, পারলে ও নেসলের মতো বড় সংস্থাও এখন এগ্রেটের সঙ্গে অংশীদারিত্বে অর্গানিক পণ্য সংগ্রহ করছে। প্রিন্স শুক্লার সাফল্যের গল্প আজ বিহারের যুবসমাজের কাছে অনুপ্রেরণা। তিনি বিশ্বাস করেন, কৃষি কোনও পিছিয়ে থাকা পেশা নয়—স্মার্ট পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির ব্যবহার করলে এখানেও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব। তাঁর লক্ষ্য, আগামী দিনে পুরো বিহারকে একটি অর্গানিক হাব হিসেবে গড়ে তোলা (Success Story)।












