বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাবা ছিলেন পেট্রোল পাম্পের নৈশ প্রহরী। দিন কাটত ছোটো একখানা বসত বাড়িতেই। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরই দুই বউয়ের জন্য ‘জোড়া তাজমহল’ বানালেন তৃণমূল নেতা।
নদিয়ার চাপড়া বাজার থেকে কৃষ্ণনগরের দিকে যাওয়ার পথেই কাঁঠালতলা থেকে একটু এগিয়েই তৃণমূল নেতা রাজীব শেখের দুই বউয়ের জন্য দুই বাড়ি। স্থানীয়রাই এই দুই বাড়ির নাম দিয়েছেন জোড়া তাজমহল। বড় বউয়ের বাড়িটি খানিক বড়। সুসজ্জিত হলঘর একতলায়। দোতলায় একাধিক ধরের সঙ্গে অত্যাধুনিক রান্নাঘর আর বাথরুম। ছোটো বউয়ের অর্থাৎ দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িটির নকশাও প্রায় এক হলেও দোতলায় একটি ঘর কম সেখানে। দুটি বাড়িই মোড়া বহু মুল্য মার্বেলে। কোথাও যে কোনও কার্পণ্যের চিহ্ন অবধি নেই। শুধু বাড়িই নয়, ওই তৃণমূল নেতার সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে একাধিক গাড়ি, একাধিক দামি মোটরবাইক, তিনটি ইঁটভাঁটা, বড় বড় পাটের গুদাম এবং একটি সুপার মার্কেটের অংশীদারি। সব মিলিয়ে সম্পত্তির পরিমাণ ছাড়াবে কয়েক কোটিকেও।
কিন্তু কে এই তৃণমূল নেতা? কীভাবেই বা নৈশপ্রহরীর পরিবারে এল এহেন বৈভব? শুরুটা হয় ২০০৮-২০০৯ সালে। তৎকালীন সিপিএমের দাপটের মধ্যেই এই রাজীবের হাত ধরেই চাপড়া বাঙ্গালঝি কলেজে প্রতিষ্ঠা পায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ২০০৮ এবং ২০০৯ এই দুই সালে পরপর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও হন রাজীব। কিন্তু এরপর ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে চাপড়ায় জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী রুকবানুর রহমান। তখন থেকেই বিধায়কের ডান হাত এবং ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন রাজীব।
রাজীব শেখের বড় বউ আসমাতারা বিবি চাপড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। এককালে পেট্রোল পাম্পের নৈশ প্রহরী বাবা কাংলা শেখ কিছুদিন আগেও দলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন। রাজীব নিজেও ছিলেন চাপড়া ব্লকের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি। সম্প্রতি গোষ্ঠি দ্বন্দের জেরেই পদ খুইয়েছেন বাবা ছেলে।
কিন্তু কোথা থেকে এল এই বিপুল সম্পত্তি? সবই কি তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে? একথায় কার্যতই ফুঁসে ওঠেন রাজীব শেখ। তাঁর দাবি, ‘কে বলেছে এ সব কথা? সব পরিশ্রমের টাকা। সৎ ভাবে ঠিকাদারি করেছি। কখনও বেআইনি কোনও কাজ করিনি বা দলকে ভাঙাইনি। আমার বাবার দীর্ঘ দিনের ভুসিমালের ব্যবসা ছিল। তা ছাড়া, বাবা প্রায় ২২ বিঘা পৈতৃক জমি পেয়েছিলেন, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।’
বলাই বাহুল্য, এককালে যে বিধায়কের হাত মাথায় নিয়েই এত কিছু এখন হাত তুলে নিয়েছেন তিনিও। ‘আমরা জানতাম, রাজীবের ঠিকাদারি ব্যবসা আছে। কিন্তু পরে আস্তে আস্তে ওর গোপন আয়ের উৎসগুলো সামনে আসতে শুরু করে। তা নিয়ে প্রশ্ন করলে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। সেই কারণেই আমরা ওকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছি’, বর্তমানে এমনটাই দাবি তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমানের।