বাংলাহান্ট ডেস্ক : সংসার একটা নদীর মত আসে পাশে যা কিছুই হয়ে যাক নদী যেমন বয়ে চলে ঠিক তেমনি সংসার কেও বয়ে চলতে হয় সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন। তেমনি অভাবের এক সংসারে হঠাৎ নেমে এসেছিল দুর্যোগের কালো ছায়া। এক ছোট্ট সংসারের কর্তা ছিলেন স্বপন কুমার রায়। একটি সাইকেলের দোকানে ছোট্ট একটি কাজ করতেন তিনি তার সাথে টুকটাক গ্যাস সারানোর কাজও চলত। বাড়িতে তার ছোট্ট মেয়ে পূজা তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। এমন সময় হঠাৎই পরিস্থিতি প্রতিকূলতা নিয়ে হাজির হলো তাদের সামনে। কোনওরকমে মেয়ে যখন মাধ্যমিক উতরেছে, ঠিক তখনই গুরুতর ভাবে শারীরিক অসুস্থতায় বিছানায় পড়ে গেলেন বাবা স্বপন কুমার।
তখন সংসারের হাল নিজের কাঁধে তুলে নেয় একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী পূজা। টিউশন করে কোনো রকমের সেই টাকায় দিন চালাতে থাকে। কিন্তু তাতেও সংসারের অভাব অনটন কিছুতেই মিটছিল না । তাই কিছু বেসরকারি সংস্থায় ছোটখাটো কাজ জোগাড় করে পূজা এবং পাশাপাশি বর্ধমান ওমেন্স কলেজ থেকে স্নাতক হন শুধু তাই নয়, সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় কম্পিউটার মার্কেটিংয়ের উপর একটি প্রশিক্ষণ নেন পূজা।
কিন্তু এখন পূজা তার একটি বাহন নিয়ে বাড়ি বাড়ি দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে খাবার। পূজার কথায় , ” ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ নিয়েছিলাম তার তিন বছর পর এই খাবার ডেলিভারির কাজে সাথে যুক্ত হলাম এখনো সেই কাজই করছি। ভালো আছি।”
পূজা যে সময় কাজ শুরু করে সেই সময় শহরে আর কোন ডেলিভারি গার্ল ছিল না। তাই তার এই চাকরি নিয়ে কথা হতো আত্মীয়-স্বজন মহলে। লোকের বাঁকা দৃষ্টি তো ছিলই তার সাথে ছিল শহরের নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা। সকাল ১১ টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হতো পূজাকে। সাইকেলে করে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ কিলোমিটার পথ কাজ করতে হলেও মাসের শেষে মাইনে যুক্ত দুই থেকে তিন হাজার টাকা। এই টাকা থেকেই সংসার চালিয়ে কিছু কিছু করে সঞ্চয় করছিল পূজা। সেই সঞ্চিত অর্থেই এখন একটি বাইক কিনেছে পূজা। এখন আর তাকে কেউ বাঁকা চোখে দেখেনা উল্টে অনেকেই তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয় এবং শহরের আরো অনেক মেয়ে তাকে দেখে এই কাজ শুরু করেছে।
তবে অনেক খারাপ অভিজ্ঞতার সাথেও কিছু ভালো অভিজ্ঞতা পূজাকে এই কাজ ভবিষ্যতেও চালিয়ে যেতে উৎসাহ যোগায়। যখন সে হাতে খাবার নিয়ে কোন বয়স্ক মানুষের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায় তখন সেই বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা তার মাথায় হাত রেখে বলেন “অন্নপূর্ণা এসেছে খাবার দিতে নিজের হাতে।” তখন পূজার সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায় এক নিমিষে।