বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একুশের নির্বাচনে বাংলায় পাখির চোখ ছিল বিজেপির। দুশোরও বেশি আসন নিয়ে বাংলায় ক্ষমতা দখলের ডাক দিয়েছিলেন বিজেপির চাণক্য তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নির্বাচনের আগে তৃণমূলের ভাঙ্গনে তৈরী হয়ে গিয়েছিল যথেষ্ট আশাবাদী পরিবেশও। কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রকাশের হতাশ হতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের কথামতোই একশোতেও পৌঁছতে পারেনি গেরুয়া শিবির। মাত্র ৭৭ আসনেই থমকে যায় তাদের পরিবর্তন রথ। আসল পরিবর্তনের থেকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা মাটি মানুষের সরকারের পক্ষেই ফের একবার রায় দেন জনগণ।ফলতো তৃতীয়বারের জন্য দু’শোর বেশি আসন নিয়ে বাংলায় ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল কংগ্রেসই। আর তারপরেই হতাশাব্যঞ্জক চিত্র দেখা যাচ্ছে বিজেপির কার্যালয় হেস্টিংসেও। নির্বাচনের আগে যেখানে রীতিমতো গমগম করত অফিস। সেখানেই এখন যেন খাঁ খাঁ শূন্যতা। এমনকি দলের ডাকা বৈঠকেও গরহাজির একাধিক তাবড় তাবড় নেতানেত্রী।
জেলার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জন্য গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার হেস্টিংসের কার্যালয় দলীয় বৈঠক ডেকেছিল বিজেপি। সেই বৈঠকে উপস্থিতির তুলনায় অনুপস্থিতির ছবিটাই যেন চোখে পরলো বেশি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত থাকলেও এদিন দেখতে পাওয়া গেল না দলের পাঁচজন সাধারণ সম্পাদকের তিনজনকেই। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেবলমাত্র সায়ন্তন বসু এবং সঞ্জয় সিংহ। অনুপস্থিত হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, রথীন বসু এবং জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো।
রাজ্য বিজেপির ১২ জন সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র চারজন। এই পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো তুঙ্গে জল্পনা। ইতিমধ্যেই দলবদলুদের উদ্দেশ্যে ফের একবার তৃণমূলে ফেরার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ জানিয়েছেন, অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোনে যোগাযোগ রাখছেন তাদের সঙ্গে। আজ এই অনুপস্থিতির তালিকায় ছিলেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সব্যসাচী দত্ত, ভারতী ঘোষরাও। এই মুহূর্তে যা যথেষ্ট উস্কে দিয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, এই মুহূর্তে চলছে কোভিড পরিস্থিতি। আর সেই কারণেই নিজের এলাকা ছেড়ে অনেকেই আসতে পারেননি বৈঠকে যোগ দিতে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে অবশ্য এই ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইতিমধ্যেই এও শোনা যাচ্ছে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজিত প্রার্থীরাই দলে এসেছিলেন কেবলমাত্র বিধায়ক হতে। নিজের এলাকা থেকে টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভেই দলবদল করেছিলেন তারা। কিন্তু অনেকেই বিজেপিতে টিকিট পেলেও মানুষ তাদের সেভাবে মেনে নেয়নি। আর সেই কারণে ইতিমধ্যেই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। তাদের ফোনে পাচ্ছেন না রাজ্য নেতারাও। এও শোনা যাচ্ছে অনেকেই যোগাযোগ রাখছেন পূর্ববর্তী দল তৃণমূলের সঙ্গে। এক্ষেত্রে আগামী দিনে বাংলায় কোন জটিল সমীকরণ তৈরি হয় আর দিকেই নজর থাকবে সকলের। তবে নির্বাচন-পরবর্তী ছবিটা যে বিজেপির জন্য হতাশাব্যঞ্জক এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।