পেপসি-কোকাকোলার ব্যবহার হোক বন্ধ! ট্রাম্পের চড়া শুল্কের আবহে মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক রামদেবের

Published on:

Published on:

Ramdev calls for boycott of US product

বাংলাহান্ট ডেস্ক:- এবার সমস্ত মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক দিল বাবা রামদেব (Ramdev)। ভারতের (India) উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) অতিরিক্ত শুল্ক (US Tariff) চাপানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভের পরিবেশ। রাশিয়া (Russia) থেকে তেল কেনার অজুহাতে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। এর ফলে বাণিজ্যে চাপে পড়েছে ভারত, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা এবং এরই সঙ্গে ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে আমেরিকা বিরোধী মনোভাব। আমেরিকার জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড ও পানীয় সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বয়কট আন্দোলনের ডাক উঠেছে।

মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক বাবা রামদেবের (Ramdev)

যোগগুরু বাবা রামদেব সরাসরি ভারতবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন আমেরিকান পণ্য বয়কট করতে। সংবাদমাধ্যম এএনআই-এৎ সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, একজন ভারতীয়কেও যেন পেপসি, কোকা-কোলা, কেএফসি, সাবওয়ে বা ম্যাকডোনাল্ডসের মতো সংস্থার কাউন্টারে দেখা না যায়। তাঁর মতে, যদি সত্যিই এমন গণবয়কট শুরু হয়, তবে তার অভিঘাত গিয়ে পড়বে আমেরিকার ভেতরেই। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার মতো দেশেও চলছে আমেরিকান পণ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন। বিশাল ১৫০ কোটির বাজার থেকে যদি ভারত আমেরিকান সংস্থাগুলিকে ছেঁটে ফেলে, তবে তাদের ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়াবে বিপুল, যা বিশ্ব বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন:- চলতি বছরেই আসছেন পুতিন! আচমকাই ভারত সফরের পরিকল্পনা বাতিল করলেন ট্রাম্প

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই প্রসঙ্গে ফের সামনে এনেছেন ‘স্বদেশি’মন্ত্র। তাঁর বক্তব্য, ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি করতে হলে দেশবাসীকে স্বদেশি পণ্যের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। ভারতীয় শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের পরিশ্রমে গড়া জিনিসই প্রথম পছন্দ হোক দেশের মানুষের। তিনি আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘ভোকাল ফর লোকাল’ মন্ত্রই এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে মোদীর মন্তব্য, আজকের দুনিয়ায় সবাই কেবল নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষাতেই ব্যস্ত, চলছে স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি।

ট্রাম্প গত ৬ অগস্ট ঘোষণা করেছিলেন, ভারতের উপরে আগেই যে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ছিল, তার উপরে আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হবে। তাঁর বক্তব্য, ভারত ব্যাপক পরিমাণে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে এবং তা আবার আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে বিপুল লাভ করছে। অথচ ইউক্রেনে যুদ্ধ চলায় মানুষ মরছে, সেই পরিস্থিতির তোয়াক্কা করছে না দিল্লি। তাই এই অতিরিক্ত শুল্ক বসানো ছাড়া তাঁর আর কোনও পথ ছিল না।

Ramdev calls for boycott of US products

আরও পড়ুন:- সোমে সুপ্রিম কোর্টে উঠবে DA মামলা, তার আগেই সরকারি কর্মীদের জন্য বড় সুখবর এল!

তবে শান্ত সুরেই পাল্টা দিয়েছে নয়াদিল্লি। সরকার জানিয়েছে, এই শুল্ক অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেওয়া হবে। ২৭ অগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে এই অতিরিক্ত জরিমানা। আপের সাংসদ অশোক কুমার মিত্তল এ বিষয়ে ট্রাম্পকে একটি খোলা চিঠি লিখে ১৯০৫ সালের ৭ অগস্টের ঐতিহাসিক স্বদেশি আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

বর্তমানে ভারত মার্কিন সংস্থাগুলির অন্যতম বড় বাজার। পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে ম্যাকডোনাল্ডস পরিচালনাকারী ওয়েস্টলাইফ ফুডওয়ার্ল্ড লিমিটেড জানিয়েছে, ২০২৪ অর্থবর্ষে তাদের আয় দাঁড়িয়েছে ২৩৯০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে পেপসিকো ইন্ডিয়ার রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ৮,২০০ কোটি টাকা, এবং গত তিন বছরে তারা ভারতীয় বাজারে প্রায় ৩,৫০০ থেকে ৪,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ভারতের বাজার এখন তাদের গ্লোবাল টপ-১৫ তালিকার মধ্যে অন্যতম। তাই স্পষ্ট, ভারত যদি আমেরিকান সংস্থাগুলিকে বহিষ্কার করার পথে হাঁটে, তবে এর ধাক্কা কেবল আমেরিকার অর্থনীতিতেই নয়, বিশ্ববাজারেও বড়সড় প্রভাব ফেলতে বাধ্য।