বাংলাহান্ট ডেস্ক : রামপুরহাট হত্যাকাণ্ড (Rampurhat Murder case) একের পর এক সামনে আসা ঘটনা যেন হার মানাবে বলিউডের অতিবড় থ্রিলার ছবিকেও। পরতে পরতে রহস্যের জট, বিচিত্র সব চরিত্র, বিচিত্র তাদের রাতারাতি উত্থানের গল্প, এই ঘটনা বিশ্বাস করতে বাধ্য করায় ছবির রূপোলী পর্দায় যা দেখানো হয় অনেক সময়ই তা অতিরঞ্জিত নয়। রামপুরহাটে খুন বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ। তারপর থেকেই রণক্ষেত্র রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। ভাদুর একপ্রকার রাতারাতি এলাকার বালি এবং পাথর মাফিয়া হয়ে ওঠার গল্প সামনে এসেছে আগেই। এবার সামনে এল বগটুইয়ের আরেক ‘খেলোয়ার’ এর ঠিকুজি কুষ্ঠী। আনারুল হোসেন। তাঁর অঙ্গুলিহেলন ছাড়া কার্যতই গাছের পাতাও নড়ত না এলাকায়।
কিন্তু তাঁর উত্থানের রাস্তাটা অবশ্য ভাদুর মতন ‘বালি পাথর’ বিছানো নয়। আনারুলের আসল বাড়ি রামপুরহাটের সুদিপুর গ্রামে। এককালে সেখানেই রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ করে কোনও ক্রমে পেট চলত। তারপর কংগ্রেস আমলে ভিড়ে গেলেন হাতের দলে। এ সভা-ও সভায় ভিড় বাড়াতে বাড়াতে শিখলেন রাজনীতির ঘাঁতঘোত। এরপর তৃণমূল আসার পর থেকে খুঁটি গাড়লেন জোড়া ফুলেই। ক্রমশ স্থানীয় বিধায়ক তথা বর্তমান ডেপুটি মেয়র আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডানহাত থেকে অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ। খুব একটা সময় লাগেনি এই লম্বা সফরেও।
গোটা বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের অনুমতি ছাড়া বাতাসও বয় না। সেই অনুব্রতর সুপারিশেই ব্লক সভাপতি হন আনারুল হোসেন। ভাদু ব্রাহ্মণী নদীর বাদশা হয়ে উঠলে রামপুরহাটের মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন হোসেন সাহেবই। স্থানীয়দের অভিযোগ, বড় ভাই আনারুলের আস্কারাতেই এলাকায় কার্যতই যা খুশি তাই করতেন ভাদু শেখ।
রামপুরহাট গণহত্যাকাণ্ড এবং ভাদু শেখের খুন দুইয়েই মূল অভিযুক্ত আনারুল হোসেন। তাঁর কথাতেই এলাকায় ওঠাবসা করে পুলিশ প্রশাসন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বগটুইতে যখন হত্যালীলা চলছে তখন খবর দেওয়া হয়েছিল আনারুলকে। তাঁর কাছে প্রাণে বাঁচানোর আর্তিই করেছিলেন আক্রান্তদের পরিবার। কিন্তু সাড়া মেলেনি কোনওই। কিন্তু দিন চিরকাল একরকম কাটে কই। বৃহস্পতিবারই ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেল হোসেন সাহেবের রাজ্যপাট।
বৃহস্পতিবারই বগটুইতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়েই আনারুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে বলেন, আনারুলের বিরুদ্ধে এমন ‘কেস সাজাতে’ যাতে আর এ জীবনে জেলের বাইরের আকাশ দেখা না হয়ে ওঠে তাঁরা। সেই মতন ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আনারুলের বাড়িতে হাজির হয় পুলিশ বাহিনী। কিন্তু সেখানেও চমক। বাড়ি এবং পুলিশকে ঘিরে দাঁড়িয়ে যায় আনারুল হোসেনের কয়েক হাজার অনুগামী। তাদের স্পষ্ট দাবি, ‘দাদাকে ছুঁতে গেলে প্রথমে পেরোতে হবে এই দশ হাজার ছেলেকে’। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এহেন নির্দেশের পর যে আর এসবে কান দেওয়ার অবস্থায় থাকবে না পুলিশ তা বলাউ বাহুল্য। শেষমেষ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তারাপীঠ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হোসেন সাহেবকে। ‘হোসেন সাম্রাজ্যের’ পতনে যে আর এক দফা উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায় সেকথা বলা নিস্প্রয়োজন। তবে এই গভীর জলের মাছ আনারুল হোসেনের গ্রেপ্তারের পর কোন দিকে মোড় নেয় রামপুরহাট হত্যাকাণ্ড, তাই এখন দেখার।