বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত সপ্তাহে নারী সুরক্ষা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া ‘অপরাজিতা (নারী অধিকার সুরক্ষা) বিল ২০২৫’ (Aparajita Bill) ফেরত পাঠালেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মাধ্যমে পাঠানো ওই বিলে একাধিক প্রশ্ন তুলে ব্যাখ্যা চেয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন। বিলটি (Aparajita Bill) এখন নবান্নে পৌঁছেছে এবং শীঘ্রই তা পাঠানো হবে আইন দপ্তরে।
‘নির্ভয়া আইন’ থাকতে ‘অপরাজিতা বিল’ (Aparajita Bill) কেন প্রয়োজন?
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রশ্ন, দেশে যখন ধর্ষণ ও নারীনির্যাতনের মতো অপরাধ দমনে ‘নির্ভয়া আইন’ ইতিমধ্যেই কার্যকর, তখন রাজ্য সরকার কেন নতুন করে পৃথক আইন প্রণয়ন করতে চাইছে?
প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ অগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। রাজপথে শুরু হয় ‘রাত দখল’ কর্মসূচি। চিকিৎসকদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জেলায়। সেই প্রেক্ষিতেই ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, নারীদের সুরক্ষায় রাজ্য সরকার আনবে একটি কঠোর আইন।
সেইমতো সেপ্টেম্বর মাসে ডাকা বিশেষ অধিবেশনে বিধানসভায় পাশ হয় ‘অপরাজিতা বিল’ (Aparajita Bill)। বিলটির সমর্থনে ছিল বিরোধী দল বিজেপিও। পরে বিলটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় রাজ্যপালের দপ্তরে। যেহেতু এই বিলটি কেন্দ্রীয় আইন ‘নির্ভয়া আইন’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই রাজ্যপাল মনে করেন, এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া কার্যকর করা যাবে না। সেইমতো বিলটি পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির দপ্তর বিলটি (Aparajita Bill) কিছু প্রশ্নসহ ফেরত পাঠায় রাজ্যপালকে। এখন সেই বিল ফের রাজভবন ঘুরে পৌঁছেছে নবান্নে।
বিল (Aparajita Bill) ফেরত আসা নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র বাকযুদ্ধ। এই নিয়ে বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন,”আমরা বিল পাশ করেছিলাম শুধু রাজ্যের জন্য নয়, গোটা দেশে যাতে নারীর প্রতি অপরাধের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, সেই উদ্দেশ্যে। কেন্দ্রের সদিচ্ছার অভাবেই এই বিল আটকে যাচ্ছে।”
অন্যদিকে বিজেপি নেতা শঙ্কর ঘোষ বলেন, “নারী সুরক্ষার নামে বিল পাশ করে কী লাভ, যখন বাস্তবেই দোষীদের আড়াল করা হয়।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “কসবা ল’ কলেজের ধর্ষণ কাণ্ডের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?”
আরও পড়ুনঃ ‘ভালো রাস্তায় হাঁটা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার’, সরকারকে কড়া বার্তা সুপ্রিম কোর্টের
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের নির্ভয়া কাণ্ডের পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছিল। সেই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় সরকার ‘নির্ভয়া আইন’ (Criminal Law Amendment Act, 2013) প্রণয়ন করে। সেই আইনেই ধর্ষণ, খুন ও নারী নির্যাতনের কঠোর সাজা নির্ধারিত। এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য কেন আলাদা আইন আনতে চাইছে?