বাংলা হান্ট ডেস্ক: রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটির (RBI MPC Meeting) চলতি মাসের (August, 2022) বৈঠক আজ অর্থাৎ শুক্রবার শেষ হয়েছে। গত বুধবার থেকে চলা মোট তিন দিনের এই বৈঠকের পর আজ সকাল ১০ টায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানান যে, এবার রেপো রেট ০.৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার ফলে গত চার মাসে রেপো রেট বৃদ্ধি পেল ১.৪০ শতাংশ। এমতাবস্থায়, ফের রেপো রেট বৃদ্ধি হোম লোন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে।
৪ মাসে তিন বার বাড়ল রেপো রেট: রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটির এই বৈঠকটি প্রথমে গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তা স্থগিত হয়ে যায়। আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, দেশের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি বছরের মে মাস থেকে রেপো রেট বাড়াতে শুরু করেছে। এই প্রসঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত মে মাসে মনিটারি পলিসি কমিটির একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছিল।
যেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ০.৪০ শতাংশ হারে রেপো রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই গত জুন মাসে ফের মনিটারি পলিসি কমিটির বৈঠকে রেপো রেট ০.৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়। প্রায় দু’বছর পর গত মে মাসেই প্রথমবার রেপো রেট বদল করে RBI। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন যাবৎ রেপো রেট মাত্র ৪ শতাংশে থাকলেও এখন তা ক্রমশ বেড়ে ৫.৪০ শতাংশে পৌঁছেছে।
এইসব কারণেই বাড়াতে হচ্ছে রেপো রেট: সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একাধিক প্রচেষ্টার পরে মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু, অন্যদিকে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সহ একাধিক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে। মূলত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিক মুদ্রাস্ফীতির কারণে ফেডারেল রিজার্ভ ক্রমাগত সুদের হার বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডও এই সপ্তাহে গত ২৭ বছরের মধ্যে সুদের হারে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি (০.৫০ শতাংশ) ঘোষণা করেছে। আর এই কারণেই, প্রায় সমস্ত বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত ছিলেন যে, রেপো রেটের বৃদ্ধি হবেই।
বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি থেকে মিলবে না ছাড়: এই প্রসঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড স্তরে রয়েছে। এমতাবস্থায়, ভারতও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে। টানা ৬ মাস ধরে জুন মাস পর্যন্ত খুচরো মুদ্রাস্ফীতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উর্ধ্বসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যদিও, মনে করা হচ্ছে যে, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দামের সহজলভ্যতা, ইউক্রেন থেকে পুনরায় গম রপ্তানি শুরু হওয়া, অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমে যাওয়া এবং খারিফ ফসলের দ্রুত বপণের কারণে আগামী সময়ে মুদ্রাস্ফীতির রেশ কিছুটা কমতে পারে। তবে, এর পরেও খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার উচ্চই থাকবে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তহবিল তুলে নিয়েছেন: RBI গভর্নর জানিয়েছেন যে, গত কয়েক মাসে, ভারত সহ উদীয়মান বাজারগুলিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি বলেন, চলতি আর্থিকবর্ষে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়েছে। এমতাবস্থায়, গভর্নর জানিয়েছেন, সব বিষয় বিবেচনা করে মনিটারি পলিসি কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে রেপো রেট ০.৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫.৪০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইভাবে এমএসএফ ও ব্যাঙ্ক রেটও ৫.৬৫ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।