বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় বর্তমানে জেলবন্দি হুগলীর প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh)। আর জেলবন্দি অবস্থাতেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ কুন্তলের। যা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। জেলে বসেই ইডি, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন কুন্তল। নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছেও চিঠি পাঠিয়েছেন কুন্তল।
আদালত এবং প্রকাশ্যে বারবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি ও সিবিআই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর, এবার একেবারে নালিশ জানিয়ে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) দ্বারস্থ হয়েছেন এই বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা। সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে হেস্টিংস থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। তার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা তার মুখ দিয়ে জোর করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলানোর চেষ্টা করছে। এই নিয়েই চিঠি লিখেছেন তিনি।
তবে ঠিক কি লেখা রয়েছে সেই চিঠিতে? ধৃত কুন্তলের দাবি, ‘‘২১ বছর জেল খাটানোর কথা বলা হচ্ছে। আমার স্ত্রীকে গ্রেফতার করবে বলছে। কিন্তু হাজার অত্যাচারের পরেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কোনও মিথ্যা স্টেটমেন্ট (বয়ান) নিতে পারেনি।’’ বহু চেষ্টা করেও অভিষেকের নাম বলাতে না পেরে তার উপর শারীরিক অত্যাচার করেছেন তদন্তকারীরা।চিঠিতে লেখা, ‘‘এত চেষ্টা করেও যখন আমার কাছ থেকে মিথ্যা কথা বার করতে পারল না, তখন শুরু হল শারীরিক অত্যাচার। আমার পেটের চামড়া বার বার টেনে ধরা হত। রোজ আমার পেটে যন্ত্রণা হয়। সেটা সিএম (মুখ্যমন্ত্রী)-ও জানেন।’’ পাশাপাশি ইডির হাতে তার গ্রেফতারির দিনের অভিজ্ঞতার কথাও লেখেন তিনি।
চিঠিতে তার দাবি, ইডির তদন্তকারীরা তার বাড়ি থেকে কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। শুধু তার নিজের বেসরকারি কলেজে ভর্তির কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, সেই সময় থেকেই অভিষেকের নাম বলানোর চেষ্টা চলছিল। পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে লাথি মারা হয় বলেও জানান তিনি।চিঠিতে কুন্তল লিখেছেন, ‘‘ইডির অফিসার আমায় বলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কো কিতনা প্যায়সা দিয়া?’ আমি বললাম, এক টাকাও না। তখন অফিসার বললেন, ‘বল, না হলে তোকে অ্যারেস্ট করব।’ আমি বললাম, মিথ্যা কথা বলতে পারব না। তখন গালাগালি দেওয়া হল। আমার মা-কেও অপমান করা হয়েছে।’’
এরপর একেবারে বিস্ফোরক অভিযোগ করে কুন্তল লেখেন, নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর তাকে ১৩ রাত জাগিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একটু ঘুমোতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, জেরার সময় তিনি যা বয়ান দিতেন, তা না লিখে ইডির এক অফিসার নিজের বক্তব্য লিখে সই করতে বলতেন বলেও অভিযোগ করেছেন কুন্তল।
যে ঘরে জেরা করা হত, সেই ঘরে ক্যামেরা চলত বলে ওই ইডি আধিকারিক ‘চোখ পাকিয়ে ভয় দেখাতেন’ বলেও অভিযোগ। কুন্তল বলেন, ‘‘ওই ঘর থেকে বেরোনোর পর আমি জানতাম, আমার কী হবে। তাই নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভয় পেয়ে, পরিবারের ক্ষতির কথা ভেবে যা বলত, তাতেই সই করতাম।’’
এরপর নিয়োগ দুর্নীতিতে আরেক ধৃত মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল প্রসঙ্গেও লেখেন তিনি। অভিযোগ জানিয়ে চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘‘তাপস কমিটমেন্ট করেছিল (তদন্তকারীদের কাছে), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। তাই, তাপস ছিল ইডির দুলাল।’’ কুন্তলের এই চিঠি ঘিরেই এখন তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি।