বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রোজ়ভ্যালিতে (Rose Valley Case) আমানত করে প্রতারিতদের টাকা যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিলীপ শেঠের নেতৃত্বাধীন অ্যাসেটস ডিজ়পোজ়াল কমিটি (এডিসি) তৈরি হয়েছিল, সেই কমিটিই এবার সিবিআই স্ক্যানারে। শুক্রবার হাইকোর্টে (Calcutta High Court) রোজভ্যালি সম্পর্কিত মামলা উঠলে ওই কমিটির বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
কমিটির ‘কাণ্ডে’ ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট | Calcutta High Court
গত দেড় মাস ধরে জমা পড়া রোজ়ভ্যালি সংক্রান্ত নথি এবং অভিযোগ খতিয়ে দেখে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে সিবিআই-কে অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার উঠেছিল।
শুক্রবারের শুনানিতে সিবিআইকে হাইকোর্টের নির্দেশ, আমানতকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা কিভাবে চলে গেল? এডিসি বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির কমিটির হাতে থাকা বাজেয়াপ্ত হোটেল চালানোর জন্যে অন্য এক সংস্থা ও দুই ব্যক্তি কী করে নিযুক্ত হলেন-এই সমস্ত বিষয়ে সিবিআইকে প্রাথমিক অনুসন্ধানে রিপোর্ট দিতে হবে। ২১ অগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের।
একইসাথে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিলীপ শেঠের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে নতুন করে হলফনামা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাবও তলব করেছে আদালত। ‘এখানে যাবতীয় অভিযোগ আপনাদের বিরুদ্ধে। তাই যাবতীয় জবাবও আপনাদেরই স্পষ্ট করে দিতে হবে।’ মন্তব্য হাইকোর্টের।
এর আগে শুনানিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হিসেবের নথি দেখিয়ে আমানতকারীদের দাবি, একাধিক ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত ২৬ জুন আদালত ওই কমিটি বন্ধ করার বিষয়ে বলেছিল। তারপরই দেখা যায় গত ৩০ জুন রোজভ্যালির আমানতকারীদের টাকা গচ্ছিত থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার হয় এডিসি-র অফিস অ্যাকাউন্টে। যার পরিমাণ ১ কোটি ৮৮ লক্ষ।
আমানতকারীদের পক্ষের আইনজীবীর দাবি, ওই একই দিনই আবার ওই অফিস অ্যাকাউন্ট থেকে চেয়ারপার্সনের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি টাকা পাঠানো হয়। এই সমস্ত বিষয় সামনে আসতেই চূড়ান্ত ক্ষোভপ্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ। তৎক্ষণাৎ সিবিআইকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
আমানতকারীদের তরফে আদালতে জানানো হয়, রোজ়ভ্যালি সংস্থার তরফে এডিসি কমিটিকে ২০২৩-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানি চালানোর জন্য ও চেয়ারপার্সনের সাম্মানিক প্রদানে ১৭ লক্ষ টাকা ও রাজ্যের তরফে পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও কী করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত।
আদালতে জমা পড়া নথি বলছে, চলতি বছর ১৭এপ্রিল একটি চুক্তিপত্র তৈরি হয়। তাতে রোজ়ভ্যালির একটি প্রায় ৪৪ কোটি টাকা বাজারমূল্যের একটি হোটেল বছরে মাত্র আড়াই লক্ষ টাকায় অন্য একটি সংস্থাকে লিজ দেওয়া হয়। এই গোটা প্রক্রিয়া এডিসি নিযুক্ত একটি বেসরকারি সংস্থা চালাচ্ছে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের রায়কে সরাসরি চ্যালেঞ্জ! সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে রাজ্য সরকার, কোন মামলায়?
সমস্ত নথিপত্র দেখে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, রোজ়ভ্যালির সব সম্পত্তি আদালতের হেফাজতে রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশেই এডিসি তৈরি হয়েছে, যা আদালতের অঙ্গ হিসেবে কাজ করছে। তারা কিছু করলে সেই দায় আদালতের উপরেও আসবে বলে পর্যবেক্ষণে জানায় হাইকোর্ট।