বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একদিকে কেন্দ্রে নূপুর শর্মা থেকে শুরু করে ‘অগ্নিপথ’ বিতর্কে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে চলেছে বিজেপি সরকার, আবার অপরদিকে সাংগঠনিক দিক থেকেও বাংলায় বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে তারা। সেই অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে সম্প্রতি সঙ্ঘের একটি সমীক্ষা প্রকাশ্যে এল। বলে রাখা ভালো, গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে মোট 18 টি আসন পেয়ে ইতিহাস তৈরি করে বিজেপি। বর্তমানে যখন 2024-এর লোকসভা নির্বাচনের দিকে সকলের নজর, সেই মুহূর্তে সঙ্ঘের একটি সমীক্ষা দাবি করেছে যে, আগামী নির্বাচনে বাংলা থেকে 2টির বেশি আসন পাওয়া কোন মতেই সম্ভব নয় বিজেপির!
উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের সময় থেকেই বাংলায় বিজেপির ভাঙন শুরু হয়। দুশোর অধিক ভোটে জয়লাভের স্বপ্ন দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত 77-এ থেমে যায় বিজেপির রথ। এরপর থেকে পদ্মফুল ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিতে দেখা যায় বহু নেতা-নেত্রীকে। মুকুল রায়, রাজীব ব্যানার্জি থেকে শুরু করে বাবুল সুপ্রিয় এবং সম্প্রতি অর্জুন সিংয়ের মতো নেতারা পুনরায় শাসক দলে যোগদান করেন। স্বভাবতই, এই ঘটনার দরুণ বর্তমানে বিজেপি সাংগঠনিক দিক থেকে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মাঝেই দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফলে সব মিলিয়ে বাংলায় বিজেপির অবস্থা যখন ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সমগ্র বাংলা থেকে দার্জিলিং এবং বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র ছাড়া আর বাকি সকল কেন্দ্রগুলি থেকে তাদের পরাজয়ের সম্ভাবনায় ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে।
উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গে গত লোকসভায় বিজেপির ফল যথেষ্ট ভাল হয়েছিল। এমনকি বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণের একাধিক জেলায় যখন বিজেপি ভরাডুবির মুখোমুখি হয় সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়েও উত্তরবঙ্গে যথেষ্ট ভালো ফল করে তারা। তবে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সেই উত্তরবঙ্গ ক্রমশ বিজেপির দিক থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছে। এমনকি, সম্প্রতি বিজেপির ‘গড়’ আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচনে জয়লাভ করে তৃণমূল এবং ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করা অর্জুন সিং বর্তমানে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। বাকি আসনগুলোতেও যে বিজেপির জেতার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম, তা প্রকাশ হয়েছে তাদেরই এক দলীয় নেতার কথায়। বিজেপি দলের এক নেতা সম্প্রতি বলেন, “বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যদি লোকসভার নির্বাচন হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমরা ভালো ফলাফল করতে পারবো না। যেসকল কেন্দ্রগুলিতে অতীতে আমরা জয়লাভ করেছিলাম, সেখানে আমাদের পরাজয়ের সম্ভাবনা প্রবল।”
এক্ষেত্রে অবশ্য বিজেপির প্রধান দুটি স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে দার্জিলিং এবং বনগাঁ। এক্ষেত্রে দার্জিলিঙে বিশাল পরিমাণ সমর্থন রয়েছে বিজেপির এবং বনগাঁয় ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকায় আপাতত কিছুটা ফ্রন্টফুটে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তবে যেভাবে একের পর এক ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছে মতুয়ারা, সেক্ষেত্রে তাদের সমর্থন কতদিন থাকে তা যথেষ্ট সন্দেহের।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে যখন সর্বদিক থেকে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে চলেছে বিজেপির, তখন দলকে চাঙ্গা করার জন্য বেশ কয়েকটি কৌশল নিতে দেখা গেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। অমিত শাহ থেকে শুরু করে জেপি নাড্ডারা বাংলায় পদার্পণ করে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সেখানে বেশ কয়েকটি নির্দেশও দিয়ে যান।
সূত্রের খবর, বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলের সকল কর্মী এবং বিধায়কদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য একাধিক টোটকা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বাংলায় প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়ে তাদের সমস্যা শোনা এবং তার সমাধানের পথ প্রশস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয় সকল নেতাকর্মীদের। মনে করা হচ্ছে, তৃণমূলের দেখানো পথেই এবার হাঁটতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়ে তাদের মন জয় করাই উদ্দেশ্য তাদের। তবে দলের অন্দরে অবক্ষয় মাঝে দুই বছরেরও কম সময়ে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বিজেপি, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে বঙ্গ রাজনীতিতে।