বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia-Ukraine War) মধ্যেই ভারতের সাথে রাশিয়ার তেল ব্যবসা প্রতিনিয়ত নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছে। সেই আবহেই এবার খবর মিলেছে যে, রাশিয়ার আর্কটিক অঞ্চল থেকে আসা অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ ছাড়ের মাধ্যমে ভারত ও চিনের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এর আগে ওই তেল ইউরোপের দেশগুলিতে বিক্রি করা হচ্ছিল। কিন্তু গত মাস থেকে ইউরোপের দেশগুলি তেল কেনা বন্ধ করে দেয়। যার কারণে এই সাপ্লাই চেন অন্য গ্রাহকদের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
মূলত ডিসেম্বরে, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, G-7 অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি এবং অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়ান তেলে প্রাইস ক্যাপ আরোপ করেছিল। পাশাপাশি, প্রাইস ক্যাপ কার্যকর করার সময় বলা হয় যে, রাশিয়া এটি না মানলে তার ওপর আরও একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। এদিকে, রাশিয়া এই প্রাইস ক্যাপ মেনে নিতে অস্বীকার করে। পাশাপাশি রাশিয়া জানিয়েছে, যে দেশ তার তেলের প্রাইস ক্যাপ নির্ধারণ করবে, তাদের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করা হবে। এরপর আর্কটিক অঞ্চল থেকে যে অপরিশোধিত তেল ইউরোপের দেশগুলিতে পাঠানো হত, তা বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ক্রেতা খুঁজতে শুরু করে তেল কোম্পানিগুলি। এই প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের এক তেল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আগে আর্কটিক তেল ইউরোপের দেশগুলোতে পাঠানো হলেও এখন অন্যত্র পাঠাতে হবে।
মে মাস থেকে আর্কটিক তেলের সরবরাহ বাড়ছে: প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ২০২২ সালের মে মাস থেকে ভারতে আর্কটিক তেলের সরবরাহ ক্রমাগত বাড়ছে। গত নভেম্বরেই ভারতের কাছে রেকর্ড পরিমান আর্কটিক তেল বিক্রি হয়েছে। রাশিয়া নভেম্বরে ভারতে প্রায় ৬৬ লক্ষ ব্যারেল তেল রপ্তানি করেছে। পাশাপাশি ডিসেম্বরে প্রায় ৪১ লক্ষ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ তেল ছিল আর্কো এবং আর্ক/নোভি পোর্টের।
অন্যদিকে সূত্র অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ভারত আর্কটিক অঞ্চল থেকেই ভারান্দে (Varandey) ক্রুডের প্রথম কার্গো পেয়েছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে লোড করে এটি পাঠানো হয়। ৯ লক্ষ ব্যারেল নিয়ে, এই কার্গোটি গত ২৭ ডিসেম্বর ইউরোপ এবং তারপর সুয়েজ খাল হয়ে ভারতের কোচি বন্দরে পৌঁছেছিল। ভারতীয় কোম্পানি ভারত পেট্রোলিয়ামকে এই তেল সরবরাহ করা হয়।
এই প্রসঙ্গে একটি ভারতীয় শোধনাগারের সূত্র জানিয়েছে যে, রাশিয়ার বিভিন্ন গ্রেডের তেল রয়েছে। যা ভারতীয় কোম্পানিগুলিকেও দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় শোধনাগারের সূত্র অনুসারে, আর্কটিক অঞ্চলের আর্কো এবং নোভি পোর্ট তেল আমেরিকান তেল মার্স এবং ওয়েস্ট টেক্সাসের তুলনায় ব্যারেল প্রতি ১০ ডলারের বেশি মার্জিনে রয়েছে। পাশাপাশি, ভারতীয় শোধনাগারের সাথে যুক্ত আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, আর্কটিক অঞ্চলের ভারান্দে তেল প্রক্রিয়াকরণ ভারতীয় শোধনাগারগুলির জন্য সহজ।
আমেরিকা সহ পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়ান তেলের উপর প্রাইস ক্যাপ আরোপ করেছে: ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকাসহ পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়ার ওপর প্রাইস ক্যাপ আরোপ করেছে। পাশাপাশি, ব্যারেল প্রতি দাম ৬০ ডলারে রাখা হয়েছে। এমতাবস্থায়, পশ্চিমী দেশগুলি প্রাইস ক্যাপ সম্পর্কে সতর্ক করেছিল যে, সবাইকে এই প্রাইস ক্যাপ মেনে নিতে হবে এবং এর ভিত্তিতেই রাশিয়া থেকে তেল কিনতে হবে।
তবে, যে দেশগুলি পশ্চিমী দেশগুলির চাপে পড়েছিল সেই তালিকায় ভারত কিন্তু নেই। বরং, ভারত খোলাখুলিভাবে রাশিয়ার সাথে তেলের বাণিজ্য করছে। যা প্রাইস ক্যাপ আরোপের আগেও অব্যাহত ছিল এবং এরপরও অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়াও প্রকাশ্যে পশ্চিমীদের এই প্রাইস ক্যাপের বিরোধিতা করেছে। পাশাপাশি, তারা এও জানিয়েছে যে তারা কোনো অবস্থাতেই এটি মেনে নেবে না।