বাংলাহান্ট ডেস্ক: সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury), ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেতা বিগত দু বছর ধরে প্রায়ই উঠে এসেছেন সংবাদ শিরোনামে। পর্দার ‘বামাক্ষ্যাপা’র ব্যক্তিগত জীবনের উপরে লাইমলাইট ছিল দীর্ঘদিন ধরে। একজন প্রকৃত প্রেমিক তথা আদর্শ মানুষ হিসাবে একরকম পূজিত হয়েছেন সব্যসাচী। প্রিয় মানুষ ঐন্দ্রিলা শর্মার (Aindrila Sharma) জন্য তাঁর লড়াই শেষমেষ সার্থক হয়নি ঠিকই, কিন্তু বহু মানুষের কাছে সত্যিকারের ভালবাসার নিদর্শন হয়ে উঠেছেন সব্যসাচী ঐন্দ্রিলা।
অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন সব্যসাচী। অনুরাগীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন তাঁকে নিয়ে। কিন্তু কোনো সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গেই কথা বলতে চাননি তিনি। অবশেষে ছোটপর্দায় ফেরার আগে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হলেন অভিনেতা। তবে শর্ত রেখেছিলেন, ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে কোনো উত্তর তিনি দেবেন না।
এই সময় ডিজিটালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সব্যসাচী জানান, তিনি বরাবরই খুব অন্তর্মুখী স্বভাবের। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় স্বচ্ছন্দ তো ননই, উপরন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারতেন না। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে প্রথমে এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু কলেজের পরিবেশ পছন্দ না হওয়ায় সেখান থেকে বেরিয়ে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়েন।
পরবর্তীকালে অক্সফোর্ড ব্রুকস থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছেন ডার্ক টুরিজম নিয়ে। কর্মক্ষেত্রও বারবার বদলেছে সব্যসাচীর। হোটেলে কাজ করেছেন, কর্পোরেট সেলসে চাকরি করেছেন। এমনকি সাক্ষাৎকারে সব্যসাচী জানান, বাবা মায়ের অমতে চাকরি ছেড়ে স্টুডেন্ট লোন আর নিজের জমানো টাকার উপরে ভরসা করে পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে।
সেখানে গিয়ে পড়েছিলেন ফাঁপড়ে। অর্থকষ্টে শেষে কেএফসিতে মেঝে পর্যন্ত পরিষ্কার করেছেন সব্যসাচী। কাজ করেছেন একটি গ্রিলড চিকেন শপে। অভিনেতার কথায়, তিনি ‘সাত ঘাটের জল খাওয়া’। তবে অভিনয়ে এসে তিনি থিতু হয়েছেন। খুলেছেন নিজস্ব ক্যাফে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ অঘটন।
শর্তের বাইরে গিয়েও সব্যসাচীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ঐন্দ্রিলার ব্যাপারে। না, এড়িয়ে যাননি তিনি। দিয়েছেন উত্তর। পাঠকরা জানলে অবাক হতে পারেন, বামাক্ষ্যাপা, সাধক রামপ্রসাদের চরিত্রে অভিনয় করা সব্যসাচী বাস্তবে আধ্যাত্মিক না হলেও সুপার পাওয়ারে বিশ্বাস করেন। তবে ব্যক্তিগত ভাবে কোনো নির্দিষ্ট মূর্তিকে পুজো বা আচার পালন তিনি করেন না বলেই জানান সব্যসাচী।
এরপরেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হাসপাতালে অসুস্থ ঐন্দ্রিলার জন্য সব্যসাচী কাতর আবেদন জানিয়েছিলেন, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে। তিনি কি কোনো টান অনুভব করেছিলেন তখন? উত্তরে অভিনেতা বলেন, তিনি ঈশ্বরকে অস্বীকার করেন না। জীবনের কঠিনতম সময়ে ডুবন্ত মানুষ খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়।
তাছাড়া সব্যসাচী জানান, ঐন্দ্রিলার সুস্থতা কামনা করে তখন বহুদূর দূর থেকে মানুষ পুজোর ফুল, তাবিজ নিয়ে আসতেন। তাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা তিনি করতে পারেন না। ঐন্দ্রিলার উৎসাহে কলম ধরেছিলেন সব্যসাচী। প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর লেখা বই। আরো একটি লেখা অসমাপ্ত হয়েই পড়ে রয়েছে। লেখার ইচ্ছা নেই সব্যসাচীর। কবে কীভাবে শেষ করবেন জানেন না। বাইক নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথাও যেন আর মনে আসে না তাঁর। এখন সব্যসাচীর শুধু একটাই লক্ষ্য, কাজ করে যেতে হবে। ঐন্দ্রিলা দূর থেকে নিশ্চয়ই দেখছেন তাঁর ‘সব্য’কে।