বাংলাহান্ট ডেস্ক: ক্যানসার, যে মারণ রোগটার নাম নাম শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে সেই রোগকেই পরপর দুবার জয় করলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (aindrila sharma)। হাসিমুখে সবসময় থাকতে পারেন না। যন্ত্রণায় শরীর ভেঙে আসে। কিন্তু পরিবারের সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে, আবার অভিনয় শুরুর কথা ভেবে নতুন করে বাঁচার শক্তি খুঁজে পান অভিনেত্রী। তাঁর এই লড়াইয়ে বড় শক্তি প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী (sabyasachi chowdhury)।
শুরুর দিনটা থেকেই ঐন্দ্রিলার সঙ্গে সঙ্গে থেকেছেন সব্যসাচী। নিজের অভিনয়ের কেরিয়ার সামলে দিল্লিতে হাসপাতালেও থেকেছেন অভিনেত্রীর সঙ্গে। এখন অবশ্য সফল অস্ত্রোপচারের পর ঐন্দ্রিলা অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। এখন নিয়মিত প্রতি মাসের শেষে অভিনেত্রীর শরীর স্বাস্থ্যের আপডেট দেন অনুরাগীদের জন্য।
এদিন সব্যসাচী লেখেন, ‘সারা মাস ধরে বহু সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নানান পত্রপত্রিকা এবং সংবাদমাধ্যম আমায় নিয়মিত প্রশ্ন করেন ওর বিষয়ে। আমি কাউকেই বিশেষ কিছু বলি না, আসলে ‘ভালো আছে’ বলতে আমার ভয় লাগে। সত্যি বলতে, চোখের সামনে আমি যা দেখেছি এবং নিয়মিত দেখছি, সেটাতে ভালো থাকা বলে না, সেটাকে অস্তিত্বের লড়াই বলে। অবশ্য এইসব খটোমটো কথা কেবলমাত্র আমিই বলি, ওকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে তাহলে এক গাল হেসে উত্তর দেবে “খুব ভালো আছি, আমার রাশিফল ভালো যাচ্ছে।”
প্রসঙ্গত বলি, অসুস্থ হওয়ার আগে জানুয়ারী মাসে কাকে যেন হাত দেখিয়েছিলো, আমি এসবে খুব একটা বিশ্বাস করি না, তাই আমায় আগে জানায়নি। তিনি কুষ্ঠীবিচার করে বলেছিলেন, “ রাশিফল ভালো যাচ্ছে, এই বছর তোমায় নিচের দিকে তাকাতেই হবে না।” সত্যিই তাই, মাথার ওপরে সিলিং ফ্যান আর ঝুলন্ত কেমোর বোতল দেখেই ওর বছর পার হতে চললো। সে যাই হোক, দেখলাম যে জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর থেকে ওর বিশ্বাসটা প্রায় উঠে গেছে।
যা বুঝলাম, এই অসুখটার কোনো নিয়মবিচার নেই, ওষুধপত্র সবই আছে অথচ নেই, চিকিৎসার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ আছে কিন্তু আরোগ্যের নেই। কথা ছিল সেপ্টেম্বর অবধি চিকিৎসা চলবে, ক্রমে সেটা গুটিগুটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ডিসেম্বরে। প্রতিবার যখন ডাক্তার বলেন চিকিৎসার সময় বাড়াতে, ওর মুখটা যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যায়। প্রতিবার কেমো নেওয়ার পর কয়েক রাত অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করে। শুয়ে থাকলে মনে হয়ে বুকে পাথর চেপে বসছে, আবার উঠে বসলে শ্বাস নিতে পারে না।
রক্তচাপ মাঝেমধ্যেই ৮০/৪০ এ এসে ঠেকে। খাওয়ার ইচ্ছা এবং স্বাদ চলে যায়। আধখানা ফুসফুস বাদ যাওয়াতে সবটাই বড় কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুব কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একপ্রকার অচেতন করে রাখা হয় ওই কয়েকটা দিন। তবে বাকি দিনগুলিতে দিব্যি ঠিক থাকে, পুজোর জন্য অনলাইন শপিং, আমার ওপর হম্বিতম্বি, লেজওয়ালা বাচ্চাদের তদারকি, সবটাই পরিপাটি করে পালন করে।’
ছয় বছর আগে একবার ক্যানসার ধরা পড়েছিল ঐন্দ্রিলার। সব্যসাচী জানালেন, প্রথম বারের থেকে এবারের পরিস্থিতি বেশ অন্য রকম। আগের বারে কেমো চলাকালীন সব কাজই করতে পারতেন ঐন্দ্রিলা। তবে এবারে মাঝে মাঝে শরীর এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে উঠে দাঁড়ানোর পর্যন্ত ক্ষমতা থাকে না তাঁর। সে সময় তাঁর অবলম্বন হয়ে দাঁড়ান সব্যসাচী। ‘বামাক্ষ্যাপা’ অভিনেতার কথায়, ‘জীবনের সেরা কিপিং’।