ফসলের মধ্যে পরিচিত লাল সোনা নামে, এই চাষ করে আয় করতে পারবেন কোটি কোটি টাকা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, দেশের কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। পাশাপাশি, গতানুগতিক চাষ ব্যতিরেকেও কৃষকদের মধ্যে নতুন এবং লাভজনক চাষ সম্পর্কে সচেতনতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের মত কৃষিপ্রধান দেশে যা যথেষ্ট ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে পরিগণিত হয়।

পাশাপাশি, নতুন এই চাষগুলির ফলে কৃষকেরাও খুব সহজেই বিরাট লাভের মুখ দেখতে পান। যার ফলে লাভজনক চাষগুলিতে ক্রমশ বাড়ছে আগ্রহ। এই প্রতিবেদনে ঠিক সেইরকমই এক চাষের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করা হল। বর্তমান সময়ে জাফরান চাষ এমনই একটি চাষ যার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের উপার্জন করা সম্ভব।

আমাদের দেশে মূলত কাশ্মীরেই এই চাষের দেখা মিললেও বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে জাফরান চাষ। সময়ের সাথে সাথে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এবং বাজারেও এর দাম নাগালের বাইরে থাকার কারণে জাফরানকে “লাল সোনা” বলা হয়। বর্তমানে বাজারগুলোর অবস্থা এমন যে, কেজি প্রতি এক থেকে দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জাফরান। পাশাপাশি, জাফরান কেশর এবং স্যাফ্রন নামেও সমধিক পরিচিত।

তবে, এই চাষের ক্ষেত্রে চাষীদের অত্যন্ত যত্নশীল হতে হয়। জমিতে গাছ লাগানো থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রায় নিখুঁত কাজ করতে হয় এখানে। এছাড়াও, এই ফসলের বীজ ১৫ বছরে একবার বপন করা হয়। এরপর প্রতি বছর ফুল আসে এবং এসব ফুল থেকেই তোলা হয় জাফরান।

জাফরানের বীজ থেকে কোনো গাছ জন্মায় না বরং, তার বীজ থেকে ফুল হয়। জাফরান হচ্ছে বেগুনি রঙের ছয় পাঁপড়ি বিশিষ্ট ফুলের পুংকেশর। একটি ফুল থেকে মাত্র তিনটি পুংকেশর পাওয়া যায়। হাতে করে গাছ থেকে ফুল তুলে এগুলি আলাদা করতে হয়। মধ্য হেমন্তের দু’সপ্তাহে সকালে সূর্য ওঠার সময় ফুল ফোটে। দিনের শেষে তা শুকিয়ে হয়ে যায়।

এই চাষে প্রচুর সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়। ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বৃদ্ধির গতিও কমে যায়। এই কারণেই এই ফসলগুলি উষ্ণ এবং রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় চাষ করা হয়।

এছাড়াও, এই চাষের ক্ষেত্রে আম্লিক, নুড়ি জাতীয় অথবা দোআঁশ এবং বেলে মাটি ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি, ফসল চাষের জন্য মাটির pH মাত্রা ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে হওয়া উচিত। যদি জাফরান জুলাই-আগস্ট মাসে রোপণ করা হয়, তাহলে প্রায় ৩ মাসের মধ্যে তা তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। এরপর কৃষকরা ফুল থেকে জাফরান বের করে বাজারে বিক্রি করতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, কয়েক বছর আগেও জাফরানের বাজার খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে সরকারি হস্তক্ষেপে এর বাজার কৃষকদের জন্য অনেক সহজ হয়েছে। এর পাশাপাশি, জাফরান চাষে কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমের পরিপ্রেক্ষিতে, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার তাদের চাষের জন্য ভর্তুকিও দেয়।

Saffron Farming Project Report.

এদিকে, প্রত্যেকদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধে এক চিমটে জাফরান মিশিয়ে খেলে ভাইটালিটি বাড়বে। পাশাপাশি, জাফরানে ঘণ কমলা রঙের জলে মিশে যায় এমন একধরণের ক্যারোটিন থাকে, যাকে ক্রোসিন বলা হয়। এই ক্রোসিন শুধুমাত্র খাবারে সোনালি রং-ই আনে না, বরং আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরণের ক্যানসার কোষ, যেমন লিউকেমিয়া, কোলন অ্যাডেনোকারসিনোমা, ওভারিয়ান কারসিনোমা প্রভৃতি ধ্বংস করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও, শারীরিক দিক থেকে অনুন্নত মেয়েদের জন্য জাফরান খুবই উপকারী।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর