বাংলাহান্ট ডেস্ক: হাড়ভাঙা পরিশ্রম, অটুট আত্মবিশ্বাস এবং কখনও না হার মানা মানসিকতা—এই তিন শক্তিকেই সাফল্যের (Success Story) সবচেয়ে বড় অস্ত্র বলা হয়। হরিয়ানার সাগর কুমারের জীবনের গল্প যেন সেই কথারই জীবন্ত প্রমাণ। দেশের কোনও বড় IIT বা NIT থেকে পড়াশোনা নয়, বরং সাধারণ এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন টেক দুনিয়ার অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি, গুগলে। লক্ষাধিকের বার্ষিক প্যাকেজে সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজের জায়গা পাকা করেছেন তিনি। সাগরের এই যাত্রা ভেঙে দিয়েছে প্রতিষ্ঠিত সব ধারণা—যে বড় প্রতিষ্ঠানে পড়লেই তবেই সফল হওয়া যায়।
হরিয়ানার সাগরের অবিশ্বাস্য সাফল্যের কাহিনি (Success Story):
হরিয়ানার গুরুগ্রামের বাসিন্দা সাগর ২০২১ সালে সারদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বি-টেক সম্পন্ন করেন। কলেজ শেষ হতেই চাকরির জন্য একের পর এক আবেদন করতে থাকেন। বহু সংস্থা তাঁকে ফিরিয়ে দেয়; একের পর এক রিজেকশনের কারণে তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সাগর থেমে যাননি। অবশেষে TCS নিনজা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে তিনি টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসে চাকরি পান। প্রথম বছরে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৩.৩ লক্ষ টাকা। পরবর্তী সময়ে TCS ডিজিটাল ক্যাপেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট (DCA) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাঁকে ভার্চুয়াল ফাংশনে পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং বেতন বাড়িয়ে ৭.৪ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হয়। তিন বছরের মধ্যে তিনি নিজের যোগ্যতায় সংস্থার একাধিক পুরস্কারও অর্জন করেন (Success Story)।
আরও পড়ুন:বিয়ের সিজনে হুড়মুড়িয়ে কমল সোনার দাম, শীঘ্রই লাখের নিচে হলুদ ধাতু? আজকের রেট
তবু সাগরের লক্ষ্য ছিল আরও বড়। তাঁর বহুদিনের স্বপ্ন ছিল গুগলে চাকরি করা। কিন্তু ছোট শহরের এক ছাত্রের পক্ষে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সহজ ছিল না। তিনি LinkedIn, Glassdoor, Wellfound–এর মতো প্ল্যাটফর্মে ৫০০-র বেশি কোম্পানিতে আবেদন করেন। প্রথমবার গুগলের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়াতে বাদও পড়েন। ওয়ালমার্টের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। কোথাও সাফল্য না মিললেও নিজের আত্মবিশ্বাসে তিনি ফাটল ধরতে দেননি। বরং বুঝতে পারেন যে তাঁর DSA—অর্থাৎ ডেটা স্ট্রাকচার ও অ্যালগরিদম এবং কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতার অভাব রয়েছে। সে কারণেই তিনি নিজের দক্ষতার দিক—ডেভেলপমেন্ট, সমস্যা সমাধান, ট্রাবল-ফিক্সিং—এসবের উপর জোর দিতে শুরু করেন (Success Story)।
পিছিয়ে না গিয়ে বরং নিজের পদ্ধতি বদলান সাগর। LinkedIn–এ এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ নেন, রেফারাল চান, Topmate-এর মতো প্ল্যাটফর্মে রেজ্যুমে রিভিউ করান। চাকরির পাশাপাশি সময় বের করে নিয়মিত পড়াশোনা, মক ইন্টারভিউ এবং স্কিল উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলেন। প্রায় নয় মাস আগে একবার গুগলের রিক্রুটারের ফোন পেলেও স্ক্রিনিং রাউন্ড পেরোতে পারেননি। কিন্তু এবারও তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং আরও মনোযোগ দিয়ে প্রস্তুতি নেন (Success Story)।

অবশেষে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এক বন্ধুর রেফারেন্সে গুগলের ইন্টারভিউ সুযোগ আবার পান তিনি—এবার প্রতিটি রাউন্ডে সফল (Success Story) হন। তাঁর স্বপ্নের চাকরি মেলে, সঙ্গে ৫০০% বেতন বৃদ্ধি। আজ সাগর কুমার গুগলে সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বছরে ৪০ লক্ষ টাকার প্যাকেজে কাজ করছেন। তাঁর গল্প আবারও প্রমাণ করল—সুযোগ একদিন নিশ্চয়ই আসবে, যদি হার না মানা যায় এবং নিজের উপর বিশ্বাসটুকু বজায় রাখা যায়।












