বাবার অসুস্থতাই বদলে দিল জীবন! চাকরি ছেড়ে সত্যব্রত যা করলেন… এখন মিলছে বার্ষিক ১.২ কোটির টার্নওভার

Published on:

Published on:

Satyabrata's Success Story will inspire you.
Follow

বাংলা হান্ট ডেস্ক: করোনা মহামারি অনেকের জীবনই আমূল বদলে দিয়েছিল। তবে ওডিশার সত্যব্রত মুনির জীবনে এই সময়টিই হয়ে উঠেছিল সাফল্যের (Success Story) সূচনা। ২০২০ সালে যখন তাঁর বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসিইউ থেকে ফিরেছিলেন, তখন শারীরিকভাবে তিনি অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। ঠিক সেই সময় সত্যব্রতের মা তাঁকে খাওয়াতে শুরু করেন ওডিশার ঐতিহ্যবাহী পুষ্টিকর খাবার ‘চাটুয়া’। দুই মাসের মধ্যে সত্যব্রতের বাবার স্বাস্থ্যের আমূল উন্নতি হয়। এই ঘটনাই সত্যব্রতকে উপলব্ধি করায় প্রাচীন ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসের অসাধারণ শক্তি।

সত্যব্রতের অসাধারণ সাফল্যের কাহিনি (Success Story):

আইআইএম আহমেদাবাদের ছাত্র সত্যব্রত আগে কর্পোরেট জীবনে ছিলেন একদম নিয়ম মেনে চলা মানুষ। ২০১৩ সালে তামিলনাড়ু অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি থেকে বি-টেক সম্পূর্ণ করে তিনি ভর্তি হন আইআইএম আহমেদাবাদে। সেখানে এলইএম কোর্স এবং সহপাঠীরা তাঁকে উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা দেন। কিন্তু স্থির ও নিরাপদ ক্যারিয়ার পছন্দ করা সত্যব্রত ঝুঁকি নিতে চাননি। ২০১৫ সালে তিনি টি এ এফ ই (TAFE) এবং পরে মহিন্দ্রা ট্র্যাক্টরসে চাকরি শুরু করেন (Success Story)।

আরও পড়ুন: মামদানির পর এবার ট্রাম্পের চিন্তা বাড়াচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সৈকত চক্রবর্তী! চমকে দেবে তাঁর পরিচয়

তবে করোনা কালে সবকিছু পাল্টে যায়। বাবার অসুস্থতা এবং ‘চাটুয়া’র অলৌকিক প্রভাব তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তিনি উপলব্ধি করেন, স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির আসল রহস্য। এই উপলব্ধি থেকেই জন্ম নেয় তাঁর নতুন স্বপ্ন—একটি এমন সংস্থা গড়া যা প্রিজারভেটিভ-মুক্ত, পুষ্টিকর এবং সহজে খাওয়ার উপযোগী খাদ্যদ্রব্য তৈরি করবে। ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি চাকরি ছেড়ে দেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুনিকো ফুডস’ (Success Story)।

‘মুনিকো ফুডস’-এর লক্ষ্য ছিল প্রাচীন খাদ্যজ্ঞানকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা। কোম্পানিটি তৈরি করতে শুরু করে মিলেট, কাটহাল ও মোরিঙ্গা দিয়ে তৈরি রেডি-টু-ইট পণ্য। তাঁদের প্রথম দুটি প্রোডাক্ট ছিল ‘গুটজি’ নামের মিলেট-ভিত্তিক প্রোবায়োটিক ড্রিংক এবং ইমিউনিটি বুস্টিং পাপড়। প্রাথমিকভাবে মাত্র ১০ লক্ষ টাকার বিনিয়োগে ওডিশার লোচাপাড়ায় গড়ে ওঠে তাঁদের ছোট ফ্যাক্টরি (Success Story)।

Satyabrata's Success Story will inspire you.

আরও পড়ুন:SSC শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হতেই ফের মামলা হাইকোর্টে, শুনতে পারেন জাস্টিস সিনহা

শুরুর দিনগুলি মোটেই সহজ ছিল না। বাজারে উচ্চমূল্য ও নতুন পণ্যের প্রতি মানুষের অনীহা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি কর্মীদের বেতন দিতেও সমস্যা হয়। তখন সত্যব্রত নিজেই বাজারে নেমে পড়েন। দোকানদার ও গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন, তাঁদের বোঝান পণ্যের উপকারিতা। সেখান থেকেই জন্ম নেয় নতুন আইডিয়া—কম দামের ছোট প্যাকেজ ‘মুনিকো মিলেট+’, যার দাম মাত্র ২০ টাকা। এতে বিক্রি হু হু করে বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাঁদের ৮০ শতাংশ বিক্রিই হয় গ্রামীণ ও আধা-গ্রামীণ এলাকায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানির আয় ছিল ৪৮ লক্ষ টাকা, আর ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.২ কোটি টাকায়—প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি। এখন মুনিকো ফুডস আরও চার রাজ্যে—আন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে—বিস্তার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বছরই কোম্পানির লক্ষ্য ৬ কোটি টাকার টার্নওভার ছোঁয়া (Success Story)।

সত্যব্রতের উদ্যোগ শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যের গল্প (Success Story) নয়, এটি এক সামাজিক আন্দোলনের দৃষ্টান্তও। কোম্পানিটি তাদের কাঁচামাল যেমন মিলেট সরাসরি ক্রয় করে ওডিশার আদিবাসী অঞ্চল—কোরাপুট, গজপতি ও কন্ধমাল থেকে। এতে স্থানীয় কৃষক ও কৃষক উৎপাদক সংস্থাগুলি (FPC) ন্যায্য দামে ফসল বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। একই সঙ্গে টেকসই কৃষিকেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। মিলেটের মতো শস্য কম জল ও রাসায়নিক সারেই চাষ হয়, যা পরিবেশের জন্যও ইতিবাচক।এইভাবে সত্যব্রত মুনি আজ প্রমাণ করেছেন—ঐতিহ্য, প্রযুক্তি ও মানবিক দায়বদ্ধতা মিললে শুধু ব্যবসা নয়, সমাজও বদলাতে পারে।