বাংলাহান্ট ডেস্ক: ধনী ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, আর সেই তালিকায় এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যাঁরা চরম দারিদ্র্য থেকে উঠে এসে সফলতা (Success Story) অর্জন করে আজ দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে পরিণত হয়েছেন। তেমনই এক অনন্য সাফল্যের গল্প হল ৭৩ বছর বয়সি শিল্পপতি সত্যনারায়ণ নুওয়ালের। মাত্র দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা, একসময় রেলওয়ে স্টেশনে রাত কাটানো এই মানুষটিই আজ ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। বর্তমানে তাঁর সংস্থা বিশ্বের ৬৫টি দেশে ব্যবসা করছে এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে ভারতের বড় নাম হয়ে উঠেছে।
সত্যনারায়ণ নন্দলাল নুওয়ালের অসাধারণ সাফল্যের কাহিনি (Success Story):
ফোর্বসের রিয়েল টাইম বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, সত্যনারায়ণ নুওয়ালের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫.২ বিলিয়ন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৪৬ হাজার কোটিরও বেশি। তিনি সোলার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর কোম্পানির অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সোলার ইন্ডাস্ট্রিজ ছিল ভারতের প্রথম বেসরকারি সংস্থা, যারা প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বিস্ফোরক তৈরির সরকারি লাইসেন্স পায়। বর্তমানে সংস্থাটির বাজার মূলধন প্রায় ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা এবং শেয়ার বাজারে এর শেয়ারের মূল্যও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে (Success Story)।
আরও পড়ুন: উত্তেজনার আবহেই বাংলাদেশকে কড়া জবাব! আসাম সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো হল ১৯ জন অনুপ্রবেশকারীকে
রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলার একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সত্যনারায়ণ নুওয়ালের জীবন শুরু থেকেই সংগ্রামে ভরা ছিল। আর্থিক দুরবস্থার কারণে দশম শ্রেণির পর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ায় পারিবারিক দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। তবুও তিনি কখনও আত্মবিশ্বাস হারাননি। নিজেই পরে বলেছিলেন, কঠিন সময়ে লড়াই করাই তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল এবং হাল ছেড়ে দেওয়া তাঁর অভিধানে ছিল না।
পরিবারের আর্থিক দায় মেটাতে তিনি বাড়ি ছেড়ে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। সেই সময় জীবিকা নির্বাহের সামর্থ্য না থাকায় বহু রাত তাঁকে রেলওয়ে স্টেশনেও কাটাতে হয়েছে। তিনি কালি তৈরি, লিজ ব্যবসা থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসা—বিভিন্ন ছোট ছোট উদ্যোগেও কাজ শুরু করেন, কিন্তু সাফল্য আসেনি। জীবনের মোড় ঘুরে যায় সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, যখন মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরে এক আত্মীয়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বিস্ফোরক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন।

আরও পড়ুন: সরকারি স্কুল শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি করছে? এবার কঠোর পদক্ষেপের পথে শিক্ষাদপ্তর
১৯৭৬-৭৭ সালে আব্দুল সাত্তার আল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়ের পর বিস্ফোরকের ডিপো ভাড়া নিয়ে তাঁর ব্যবসার ভিত্তি গড়ে ওঠে। কয়লা খনি থেকে অর্ডার আসতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়। নব্বইয়ের দশকে তিনি এই ক্ষেত্রের বড় ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। ১৯৯৫ সালে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে নিজের সংস্থা সোলার ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালে সংস্থা শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং ২০১০ সালে প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বিস্ফোরক তৈরির লাইসেন্স পেয়ে সোলার ইন্ডাস্ট্রিজ ভারতের শিল্প ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করে।












