বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সৌমিত্র খাঁ-কে নিয়ে বর্তমানে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্যে নিজের দলকে নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। এমনকি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও ছাড়েন নি তিনি। তবে, কারও নাম না নিয়েই তিনি নিজের বাক্যবাণ চালিয়েছেন। কারণ কী? কেন নিজের দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন সাংসদ?
আসলে, দু’দিন আগে বঙ্গ বিজেপির নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। সেখানে অনেক চেনা, অচেনা নামীদামী মুখ জায়গা পেলেও তালিকায় নাম ছিল না বিষ্ণুপুরের সাংসদের। এরপরই তিনি নিজের বাক্যবাণে গেরুয়া শিবিরকে বিঁধতে থাকেন।
এতদিন ধরে সৌমিত্রর নিশানায় থাকতেন শুধুই তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এবার তিনি নিশানায় নিয়েছেন নিজের দলকেই। তবে কী এবার অন্যান্যদের মতো সৌমিত্র খাঁও দলবদল করতে চলেছেন? এই নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই জল্পনায় জল ঢেলেছেন খোদ সাংসদ।
বুধবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করে সৌমিত্র বাবু লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষের যশস্বী, সন্মানীয়, আদরনীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি ও অমিত শাহ জীর আর্শীবাদ মাথায় নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি করতে এসেছি, এই বিষয়ে কোন অবকাশ নেই। এর আগেও আমার উপর অনেক আঘাত এসেছে, শত কষ্ট উপেক্ষা করেও আমি এগিয়ে যাব। “যেটা ঠিক সেটা ঠিক, যেটা ভুল সেটা ভুল” এটা আমি সর্বদা বলবই।”
ওনার এই মন্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে উনি দলবদল করছেন না। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মতোই সৌমিত্রবাবুর জন্যও তৃণমূলের দরজা পুরোপুরি বন্ধ। এর কারণ হল, নন্দীগ্রামের বিধায়কের নিশানায় যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় থাকেন। তেমনই বিষ্ণুপুরের সাংসদের নিশানায় থাকেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তৃণমূলের নম্বর ১ ও ২ কে আক্রমণ করে যে কেউ সেই দলে ফিরে যাবেন না, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আবার সৌমিত্রর ঘনিষ্ঠদের মতে, সাংসদকে বারবারই উপেক্ষা করা হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে। ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, সৌমিত্র খাঁকে বিজেপিতে ভালো জায়গা দিলে কেন্দ্র তাঁকে বেশি গুরুত্ব দেবে৷ তাই রাজ্যে বিজেপির কিছু নেতা চাইছে না সৌমিত্র খাঁ বেশি গুরুত্ব পান। উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে পরিসংখ্যান দেখলে সৌমিত্র খাঁ দ্বিতীয় সাংসদ যিনি নিজের কেন্দ্রে গেরুয়া ঝড় ধরে রাখতে সক্ষম ছিলেন। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লাকে বাদ দিলে সৌমিত্র খাঁ নিজের লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিধানসভার পাঁচটি আসন জিতিয়ে নিয়েছিলেন। যা, বাকিদের থেকে ঢের ভালো ফলাফল।
তবে, এত ভালো ফলাফল করেও তেমন গুরুত্ব পাননি বিষ্ণুপুরের সাংসদ। এর আগে ওনাকে কেন্দ্রের মন্ত্রী করা হবে বলে জল্পনা উঠেছিল। কিন্তু, তা হয়নি। কানাঘুষো শোনা যায় যে, রাজ্যের নেতারাই কেন্দ্রকে সৌমিত্রবাবুর নাম কেটে দিতে বলেছিলেন। তবে, এটা কে করেছিলেন? তা প্রকাশ্যে আসেনি।
এই নিয়ে বিষ্ণুপুরের সাংসদের অনেক রাগ-অভিমান থাকলেও তিনি বাবুল সুপ্রিয়র মতো দল ছেড়ে যাননি। এমনকি গত বিধানসভা নির্বাচনে ওনার স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তিনি ডিভোর্স পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছিলেন। সেই আঘাত এখনো দগদগে হলেও বিজেপির তরফ থেকে সৌমিত্রবাবুকে তেমন সম্মান দেওয়া হয়নি। আর এই নিয়েই ওনার বুকের কোণে কোথায় হয়ত অভিমান জমে রয়েছে। তবে, সৌমিত্রবাবু এটাও স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি কোনওমতেই বিজেপি ছাড়ছেন না এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে তার লড়াই আগের মতোই জারি থাকবে।