‘লাগাও’, ‘শিবলিঙ্গে কন্ডোম’, থেকে মমতাকে আক্রমণ, কোন ‘জাদুবলে’ লোকসভার টিকিট পেলেন সায়নী?

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রবিবার ব্রিগেড (Brigade) সমাবেশ থেকে ২০২৪ লোকসভা ভোটের (Loksabha Vote) প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তৃণমূল (Trinamool Congress)। আর তাতেই লাইমলাইটে সায়নী ঘোষ (Sayani Ghosh)। যাদবপুরে এবার জোড়াফুল প্রার্থী তৃণমূলে যুবসভানেত্রী সায়নী। সম্প্রতি সাংসদ হিসেবে মিমি চক্রবর্তী নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছে। রাজনীতি থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই দলও আর তাকে টানাটানি করল না।

২০১৯ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে জয়ী মিমি চক্রবর্তীকে সরিয়ে এবার লোকসভা ভোটে সায়নী ঘোষকে টিকিট দিল তৃণমূল কংগ্রেস। মিমির বদলে এবার যাদবপুরে দাঁড়াবেন আরেক তারকা নেত্রী সায়নী ঘোষ। রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে সায়নীর নাম ঘোষণা করেন দোলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা।

   

শোনা যায় তৃণমূলে যোগদানের আগে কিছুটা বাম মনোভাবাপন্ন ছিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হঠাৎই এন্ট্রি নেন শাসক দল তৃণমূলে। একুশের বিধানসভা ভোটে আসানসোল দক্ষিণ আসনে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়েছিলেন সায়নী। তবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। হেরে যান তিনি বিজেপির অগ্নিমিত্রা পলের কাছে।

তবে দলকে জয়ী না করতে পারলেও তৃণমূল তাকে মোটেও হতাশ করেনি। যুব তৃণমূলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। আর এবার কলকাতার অন্যতম গুপুত্বপূর্ণ অঞ্চল যাদবপুরের টিকিটে লড়াকু সায়নী। তৃণমূলের এই যুবনেত্রী সর্বদাই ঝাঁঝালো। বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ সাথে একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে বড়সড় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। জায়গা করে নিয়েছেন তৃণমূলের নম্বর ওয়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনেও।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত! মালদহের TMC প্রার্থী শাহনওয়াজের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অমিত মালব্য

শাসক দলে আসার এই তিন বছরের মধ্যে একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন সায়নী। ঘটিয়েছেন একের পর এক বিতর্কিত কান্ড। তবে তার আগেও কিছু কম নয়। ২০১৫ সালে সায়নী ঘোষ নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে (বর্তমানে যা এক্স) থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার করেছিলেন। যাতে ছিল একটি শিবলিঙ্গের ছবি। তাতে কন্ডোম পরাচ্ছিলেন এডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ‘বুলাদি’। যা বুলা দির শিবরাত্রি নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাট ভাইরাল হয়েছিল।

যদিও পরে সায়নী ঘোষ সেই জানান, তার টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। ওই পোস্ট দেখার পরই ডিলিট করে দেন। সায়নীর দাবি ছিল, ২০১০ সাল থেকে তার অ্যাকাউন্ট খোলা হলেও তিনি তাতে সক্রিয় ছিলেন না। ২০১৭ সাল থেকে ফের তিনি সক্রিয় হন। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত বিতর্ক ছাড়েনি সায়নীকে।

এরপর চলচ্চিত্র পরিচালক অনীক দওর সিনেমা ‘ভূতের ভবিষ্যত’ নিয়ে একসময় শোরগোল পড়ে যায়। পরিচালকের অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের অঙ্গুলিহেলনেই মুক্তির পরদিনই কলকাতা-সহ রাজ্যের সমস্ত বড় সিনেমা হল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল ছবিটি। সেই সময় সারাসরি মমতার দিকে আঙুল তুলে অভিনেত্রী সায়নী বলেছিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় পদ্মাবত-এর হামলার বিরোধিতা করেছিলেন। বাংলায় সিনেমাটি প্রদর্শনের জন্য প্রযোজকদের সমস্ত নিরাপত্তার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তাহলে বাংলতে বাংলা সিনেমার প্রতি তার এহেন আচরণ কেন?’

তবে মমতাকে প্রশ্ন করা সেই সায়নীই রাতারাতি জায়গা করে নিলেন তৃণমূলে। অভিনয় জগৎকে টাটা করে এখন ফুলটাইম রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত মমতার ‘ঘরের মেয়ে’ সায়নী। গত বছর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের প্রাক্তন যুবনেতা কুন্তল ঘোষের সূত্র ধরে তলব আসে সায়নীর। ইডি জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন সায়নী। তবে সর্বদাই যুবনেত্রীর পাশেই থেকেছে তৃণমূল সুপ্রিমো সহ গোটা দল। মমতার বড়ই ‘আপন’ তৃণমূলের সায়নী।

গত বছর পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের একটি জনসভায় মানস ভূঁইয়া এবং সায়নীর করা মন্তব্য নিয়েও বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ২৯ মার্চের সেই সভায় মানস ভূঁইয়া মন্তব্য করেন, ‘সায়নী লাগাও’। এর পাল্টা সায়নী বলেন, “লাগাও। ঠিক বলেছে”। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায রীতিমতো ঝড় উঠেছিল। খানিক অস্বস্তিতে পড়েছিল তৃণমূলও।

sayooni ghosh

দুদিন আগেও সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে সায়নী বলেছিলেন, ‘গোমূত্র দিয়ে কুলকুচি করে এসে রায় দিতেন ওই বিচারপতি!’ উল্লেখ্য, এবারে প্রার্থী তালিকায় ঠাঁই হয়নি একাধিক তারকা সাংসদের। গত বার জেতার পরও বাদ গিয়েছেন মিমি, নুসরতের মতো নামও। তবে সেখানে বিধানসভা নির্বাচনে হেরেও যাদবপুরের মতো জায়গায় প্রার্থী করা হল সায়নীকে। মিমিকে সরিয়ে যাদবপুরের গুরু দায়িত্ব এখন সায়নীর কাঁধে।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর