করুণ অবস্থা ভারতের এই প্রতিবেশী দেশের, পেপার কেনার টাকা না থাকায় বন্ধ হয়ে গেল পরীক্ষা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রবল অর্থসংকটের মুখে পড়েছে দেশ! এমনকি, অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, কাগজ কেনার টাকা (Indian Rupee) পর্যন্ত না থাকায় বন্ধ হয়ে গেল পরীক্ষাও। শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও ঠিক এইরকমই এক ঘটনা ঘটেছে ভারতের এক্কেবারে পড়শি দেশে। আর যা শুনে চমকে গিয়েছেন সকলে। মূলত, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।যেই কারণে দেশে কাগজ কেনার মত ডলার না থাকায় ইতিমধ্যেই সে দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি, কবে এই বাতিল হওয়া পরীক্ষা সম্পন্ন হবে সেই বিষয়েও স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, বাইরে থেকে কাগজ কেনার মতো ডলার দেশে নেই। যার ফলে সোমবার থেকে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দেশে কাগজের তীব্র সংকটের কারণে সেই পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে যে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অভাবের কারণে বাইরে থেকে কাগজ ও কালি আমদানি করা যাচ্ছে না। যার কারণে কোনো স্কুলের অধ্যক্ষই পরীক্ষা পরিচালনা করতে পারবেন না।

এই বেহাল অবস্থার জেরে সরকারি সূত্রে EdDTV ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে যে, সরকারের এহেন পদক্ষেপে দেশের মোট দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শ্রীলঙ্কায় প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। আবার সেখানে, টার্ম টেস্ট হল এক ধরণের চূড়ান্ত পরীক্ষা যেখানে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে যেতে পারবে কি না তা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার দ্বারা নির্ধারিত হয়। এটাকেই মূলতবছরের শেষ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এদিকে, শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ারে এত ঘাটতি দেখা দিয়েছে যে, প্রয়োজনীয় আমদানির জন্য টাকাও তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত কয়েকদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানিও বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও, এই সংকট থেকে নিস্তার পেতে শ্রীলঙ্কা চিনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেও সেখান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য যে, এমনিতেই প্রবল বৈদেশিক ঋণে নিমজ্জিত রয়েছে শ্রীলঙ্কা। এছাড়াও, দেশটি সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে চিনের কাছ থেকেই। প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলারের নগদ সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে এই দেশ। এমতাবস্থায়, সরকার ঘোষণা করেছে যে, তারা ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণ সংকট নিরসনে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে আইএমএফের কাছ থেকে একটি বেল-আউট প্যাকেজ চাইবে। যার ফলে IMF অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দেশের প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অনুরোধের বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছে।

899bffe81aaff5e33369346d81f8a7ac original 1

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার প্রায় ৬.৯ বিলিয়ন ডলারের একটি বিপুল ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব রয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত, সে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার ছিল মাত্র ২.৩ বিলিয়ন ডলার। এই কারণে শ্রীলঙ্কায় অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র ঘাটতি রয়েছে। এমনকি, তেল ও খাবারের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইনও ক্রমশ চোখে পড়ছে এখন। এছাড়াও, দুধ, চিনি, ডাল এবং চালের রেশনেও রয়েছে লম্বা লাইন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর