বাংলাহান্ট ডেস্ক: পূর্ব বর্ধমানের ব্যস্ত বর্ধমান (Bardhaman) রেলস্টেশনে রবিবার সন্ধ্যায় ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর দুর্ঘটনা। ট্রেন ধরতে যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে আহত হলেন অন্তত ১০ জন। ঘটনার পরই রেলস্টেশন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রেল প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সকল আহতের অবস্থাই আপাতত স্থিতিশীল।
বর্ধমান (Bardhaman) স্টেশনে ধাক্কাধাক্কিতে পদপিষ্ট একাধিক
চোখে দেখা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একই সময়ে তিনটি ট্রেনের আগমনে শুরু হয় ভিড় ও বিশৃঙ্খলা। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে বর্ধমান (Bardhaman)-হাওড়া লোকাল, ছয় নম্বরে রামপুরহাট লোকাল এবং সাত নম্বরে আসানসোল লোকাল দাঁড়িয়ে ছিল। হাওড়া, রামপুরহাট ও আসানসোলগামী ট্রেন ধরার জন্য হাজার হাজার যাত্রী একসঙ্গে নেমে আসেন ফুট ওভারব্রিজের দিকে। সিঁড়ি ছিল তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ, ফলে ভিড়ের চাপ সামলাতে না পেরে কয়েকজন যাত্রী সিঁড়িতে পড়ে যান। তাঁদের উপর দিয়ে বয়ে যায় যাত্রীদের ঢল, আর তাতেই ঘটে যায় এই দুর্ঘটনা।
আরও পড়ুন:হিন্দুদের অত্যাচারের প্রসঙ্গে ভুয়ো খবর লিখেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম! অদ্ভুত দাবি ইউনূসের
রেলস্টেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই রেলওয়ে পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হলেও আশঙ্কাজনক নয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। রেল প্রশাসন ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার খবর পেয়ে বর্ধমান (Bardhaman) দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন। তিনি রেলের বিরুদ্ধে তীব্র গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। তাঁর বক্তব্য, “বর্ধমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, সিঁড়িগুলো সংকীর্ণ, আর যাত্রী নিয়ন্ত্রণের কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। আজকের এই দুর্ঘটনা সেই অব্যবস্থার ফল।”
স্থানীয় যাত্রী ও নিত্যযাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই বর্ধমান (Bardhaman) স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন, অথচ ভিড় নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কর্মী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। যাত্রীদের দাবি, পিক আওয়ারে বিশেষ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করতে হবে এবং ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়িগুলি প্রশস্ত করতে হবে।
আরও পড়ুন:৫৬ বছরের ইতিহাসে নতুন নজির! BSF-এর এয়ার উইংয়ের প্রথম মহিলা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হলেন ভাবনা চৌধুরী
রেল প্রশাসনের তরফে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সেই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” তবে ঘটনার পর থেকেই বর্ধমান (Bardhaman) স্টেশনে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ এখনও কাটেনি। অনেকেই বলছেন, একটু সাবধানতা নিলেই এই দুর্ঘটনা রোধ করা যেত।
বর্ধমানের (Bardhaman) মতো ব্যস্ত জংশনে এই দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল যাত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর। যতক্ষণ না পরিকাঠামো ও নিরাপত্তার দিকে যথাযথ নজর দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ এমন দুর্ঘটনা যে কোনও দিন আবারও ঘটতে পারে— এমন আশঙ্কাই এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে।