বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশে (Bangladesh) ফের ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়া চমক ফেলেছে জামাত-ই-ইসলামি। নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান সংখ্যালঘুদের ওপর অতীতে চালানো নির্যাতনের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন। তাঁর এই বক্তব্যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা।
বাংলাদেশে (Bangladesh) ভোটের আগে ভোল বদল জামাতের
সাংবাদিক সম্মেলনে জামাত আমিরকে বলতে শোনা যায়, “১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যে-যেখানে যত কষ্ট পেয়েছেন, আমরা বিনা শর্তে তাঁদের কাছে মাফ চাই।” তিনি আরও দাবি করেন, “আমি অন্তত তিনবার এই ক্ষমা চেয়েছি। আমাদের একশোটা সিদ্ধান্তের মধ্যে ৯৯টা সঠিক হলেও একটা বেঠিক হতে পারে। যদি আমার কোনও সিদ্ধান্তের কারণে জাতির ক্ষতি হয়ে থাকে, তাহলে তার জন্য ক্ষমা চাইতে আমার কোনও অসুবিধা নেই।” এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনীতিতে নড়েচড়ে বসেছে সকলেই। অনেকেই মনে করছেন, এটি আসন্ন নির্বাচনের আগে জামাতের ‘ইমেজ পাল্টানোর’ চেষ্টা। রহমান বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পিআর-সহ একাধিক ইস্যুতে গণভোট হওয়া উচিত। জামাত ক্ষমতায় এলে সংবিধানের অধিকার অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই থাকবে।” তাঁর দাবি, তিনি ছাড়াও জামাতের প্রাক্তন নেতারা—মৌলানা মতিউর রহমান নিজামি এবং অধ্যাপক গোলাম আজম—পূর্বে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এই ‘ক্ষমা চাওয়া’ মূলত একটি নির্বাচনী চাল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের (Bangladesh) বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন মৌলবাদী শক্তিগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তখন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামাতের ভূমিকা বিতর্কিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক সেনাদের সঙ্গে মিলে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে জামাতের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এর পরেও বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় জামাতের নাম উঠে এসেছে।
শেখ হাসিনার আমলে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। জামাত ও হিজবুত তাহরিরের মতো উগ্র সংগঠনগুলিকে কার্যত নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু নতুন অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর বদলে গিয়েছে বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনৈতিক চিত্র। উগ্র ধর্মীয় শক্তিরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ। ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।

এই প্রেক্ষিতেই জামাত আমিরের ‘ক্ষমা চাওয়া’ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে বিশ্লেষক মহল। তাঁদের মতে, নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ফেরানোর চেষ্টা করছে দলটি। দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের কাছে ‘সহনশীল’ ভাবমূর্তি গড়ে তোলাই এই বক্তৃতার মূল উদ্দেশ্য। তবে বাংলাদেশে (Bangladesh) অতীতের ইতিহাস ভুলে এই কৌশল কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে।













