মাশরুম চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন ইনি! প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি জনকে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এখানে বিভিন্ন ধরণের কৃষিজ পণ্যের দেখা মিললেও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকেই লাভজনক চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ঠিক সেইরকমই এক চাষ হল মাশরুম চাষ। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা এমন একজন মহিলার কথা উপস্থাপিত করবো যিনি শুধু মাশরুম চাষই শুরু করেননি, পাশাপাশি আশেপাশের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কীভাবে মাশরুম চাষ করতে হয় তাও শিখিয়েছেন।

বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার বলভদ্রপুর গ্রামের পুষ্পা ঝা বর্তমানে খুব বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তাঁর মাশরুম চাষের কারণে। ২০১০ সাল থেকে মাশরুম চাষ করছেন তিনি। পাশাপাশি, এই চাষের মাধ্যমেই পুষ্পা খুব সহজেই প্রতিদিন প্রায় ১,০০০-১,৫০০ টাকা উপার্জন করছেন।

পুষ্পা প্রতিদিন প্রায় ১০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করেন, যা তিনি বাজারে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করে দেন। এমতাবস্থায়, সারা বছর মাশরুম চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন তিনি। শুধু তাই নয়, আশপাশের এলাকার চাষিরাও মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন তাঁকে দেখে।

পুষ্পা যখন তাঁর গ্রামে মাশরুম চাষ শুরু করেন, সেই সময়ে গ্রামের কৃষকরা এই চাষ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। যেই কারণে মাশরুম চাষ করা তাঁর জন্যও খুবই কঠিন ছিল। সেই সময়ে পুষ্পা ঠিক করেছিলেন সমস্তিপুরে অবস্থিত ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নেবেন তিনি।

এমতাবস্থায়, পুষ্পা এবং তাঁর স্বামী রমেশ, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক, ৬ মাস ধরে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নেন। তারপরে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে মাশরুম চাষ শুরু করার জন্য, পুষ্পা পুসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১,০০০ টি ব্যাগ কিনেছিলেন। যার প্রতিটিতে ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির মাশরুম ছিল। এরপর তিনি ও রমেশ একসঙ্গে তাঁদের খামারে একটি কুঁড়েঘর তৈরি করে মাশরুম চাষ শুরু করেন।

পুষ্পা ও রমেশের কঠোর পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছিল এবং তাঁরা প্রথমেই খুব ভাল ভাবে মাশরুম চাষ করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের গ্রামের কেউই মাশরুম সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। এমতাবস্থায় কোনো ব্যক্তি মাশরুম কিনতে চাইলে পুষ্পা বিনামূল্যে মাশরুম দিতে শুরু করেন তাঁকে।

তিনি চেয়েছিলেন যে, লোকেরা প্রথমে মাশরুমের স্বাদ গ্রহণ করুক, তারপরে তাঁরা নিজেরাই মাশরুম কিনতে উৎসাহিত হবে। কিন্তু অনেকেই বিনামূল্যের মাশরুমকে বিষাক্ত বলে ফেলে দিয়েছিলেন, যার জেরে পুষ্পার এই লড়াই অনেক কঠিন হয়ে যায়।

এরপর ধীরে ধীরে পুষ্পা ও রমেশ ২০০ গ্রামের প্যাকেট তৈরি করে সবজি বিক্রেতাদের কাছে মাশরুম বিক্রি করতে থাকেন। পাশাপাশি, তাঁরা সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি করেন যে, মাশরুমের প্যাকেট বিক্রি হলেই মাশরুমের জন্য টাকা নেবেন তাঁরা।

এমন পরিস্থিতিতে সবজি বিক্রেতাদের প্যাকেট মাশরুম দেওয়ার পর ধীরে ধীরে তা বিক্রি শুরু হলে তাঁরা প্রতিদিন সকালে সবজি বিক্রেতাদের কাছে মাশরুমের প্যাকেট দিতেন এবং সন্ধ্যায় টাকা নিতেন। এভাবে বাড়তে থাকে বিক্রিও। যদিও, বর্তমানে পুষ্পার চাষ করা মাশরুমের চাহিদা দ্বারভাঙ্গার স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিহারের অন্যান্য জেলাগুলিতেও দ্রুতহারে বাড়ছে।

এছাড়াও, পুষ্পা পুসা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে শুকনো মাশরুম বিক্রি করছেন। যা বিস্কুট, টোস্ট এবং চিপসের মতো অনেক খাদ্য পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মাশরুম দিয়ে তৈরি এসব খাবার যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনি খুবই সুস্বাদু।

এই প্রসঙ্গে পুষ্পা বলেন, যেসব মাশরুম সবজির জন্য বিক্রি হয় না, সেগুলো আচার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। দ্বারভাঙ্গায় মাশরুমের আচারের খুব চাহিদা রয়েছে। যার কারণে মাশরুমগুলি ব্যবহার করা হয় এবং কোনো অপচয় হয় না।

WhatsApp Image 2022 02 15 at 8.35.43 PM

এদিকে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পুষ্পা নিজে মাশরুম চাষ করার পাশাপাশি আশেপাশের মহিলাদের প্রশিক্ষণও দেন। মাশরুম চাষে এ পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। এই প্রশংসনীয় কাজের জন্য, পুষ্পাকে ২০১৭ সালে পুসা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অভিনব কিষাণ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি, পুষ্পা তাঁর কৃষিকাজের জন্য আরও অনেক পুরস্কারও জিতেছেন। ২০১৫ সালে নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেন পুষ্পা।

মাশরুম চাষে স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি বিনামূল্যে বীজও দেন, যাতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল নারীরা মাশরুম চাষ করে ভালো উপার্জন করতে পারেন। এছাড়াও তাঁকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় প্রশিক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। পুষ্পা দ্বারভাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে মেয়েদের মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণও দেন। এছাড়াও, দ্বারভাঙ্গা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন পুষ্পা।

পুষ্পা নিজে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তিনি একজন লড়াকু মহিলা এবং তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে পুষ্পা মাশরুম চাষকে আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান এবং নিজের একটি কোম্পানি শুরু করার স্বপ্ন দেখছেন। পাশাপাশি, পুষ্পা মাশরুম চাষের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী হতেও সাহায্য করেন। এছাড়া, তিনি বিহারে মাশরুম চাষের প্রচার করতে চান যাতে তাঁর রাজ্য এই চাষে এগোতে পারে।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর