বাংলা হান্ট ডেস্ক: সবকিছুই মোটামুটি চলছিল ঠিকঠাক! বাবার মৃত্যুর পর বড় দাদাই ধরে ছিলেন সংসারের হাল। কিন্তু, বাবার পর সেই দাদারও আকষ্মিক মৃত্যুতে ঘটে ছন্দপতন! এমনকি, এক লহমায় এই ঘটনা কার্যত জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল দৈলতাবাদ থানার ছয়ঘরির বাসিন্দা মৌসুমী বিশ্বাসের। বাংলা নিয়ে পড়া সাহিত্যপাগল মেয়েটা তখন বড় আশা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর বিভাগে পাঠরতা ছিলেন। কিন্তু, হঠাৎই সব ঢেকে যায় গভীর অন্ধকারে।
এমতাবস্থায়, পরিস্থিতির চাপে সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে লেখাপড়ায় ছেদ টেনে বাবার রেখে যাওয়া ছ’কাঠা জমির উপর সবজি চাষ শুরু করেন মৌসুমী। পরিবারের সদস্যদের ভালো রাখার তাগিদে তীব্র পরিশ্রমের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করে আজ সফলতা অর্জন করেছেন মৌসুমী। এমনকি, রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে ভারত সরকারের একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন এই বঙ্গতনয়া।
মূলত, বাবা এবং দাদার মৃত্যুর পরে মা, দিদি, আর এক দাদা সহ মৃত দাদার ছেলে-মেয়ের দায়িত্বও তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। এমতাবস্থায়, আর কোনো উপায় না পেয়ে পড়া ছেড়েই তিনি বাবার রেখে যাওয়া ছ’কাঠা জমি আর কৃষি সরঞ্জাম নিয়ে চাষাবাদে মনোযোগ দেন। এমনকি, ধীরে ধীরে তিনি এই কাজে সফলও হতে থাকেন। আপাতত, মাটির বাড়ির পরিবর্তে মৌসুমীর রয়েছে একটি পাকা বাড়ি।
শুধু তাই নয়, জমির পরিমানও তিনি বাড়িয়েছেন অনেকটাই। এখন তাঁর নিজের কৃষি জমির পরিমাণ প্রায় ছ’বিঘার কাছাকাছি। এই প্রসঙ্গে মৌসুমী জানান, “আমার দাদার মৃত্যুর পর আমি পড়া ছেড়ে ফিরে আসি। আমার মা অসুস্থ। আরেকজন দাদা অ্যাজমার রোগী। এমনকি, আমার দিদিও অসুস্থ। দাদার ছেলে-মেয়েরাও ছিল। আমি সেই সময় সবজি চাষের পাশাপাশি টিউশন করতাম। আর এখনও আমি চাষবাস করে দাদার ছেলে-মেয়েদের মানুষ করছি।”
আপাতত, নিজের জমিতে পটল, লঙ্কা, বেগুন, কুমড়ো, লাউ সহ বিভিন্ন ফসল ফলিয়েছেন মৌসুমী। পাশাপাশি, তাঁর একটি কলা বাগান এবং একটি পানের বরজও রয়েছে। মূলত, কৃষি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এবং কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিয়ে মৌসুমী এখন কৃষিকাজে রীতিমত দক্ষ হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিনই নিজে জমিতে গিয়ে কাজ করেন তিনি। এলাকার কৃষকদের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও তিনি কৃষকদের পরামর্শ দিতে যান। এক কথায় মৌসুমী, “যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে….” এই প্রবাদকেই যেন ফের একবার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।