একসময় ছিল না জুতো কেনার টাকা, আজ নিজের হাতে কোম্পানি গড়ে পদ্মশ্রী পেলেন ইনি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক সফল মানুষের সফলতার পেছনে থাকে এক অদম্য লড়াই। যে লড়াইর প্রতিটি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই তাঁরা পৌঁছে যান সফলতার শীর্ষে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার মাধ্যমেই আজ তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয়, পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছে সরকারও।

চলতি বছরেই ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে “পদ্ম” পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। মোট ১২৪ জনকে পদ্ম পুরস্কারে সম্মানের জন্য মনোনীত করা হয়। এই বছর “পদ্মশ্রী” পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন মণিপুরের মুক্তামনি দেবী। বর্তমান প্রতিবেদনে তাঁর সফলতা এবং পদ্মশ্রী পাওয়ার উত্তরণের কাহিনিই আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করা হল।

বর্তমানে পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়ার পর, তাঁর নাম গর্বের সাথে উচ্চারিত হলেও মুক্তামণি দেবীর জীবন একসময় মোটেও সহজ ছিল না। বরং টিকে থাকার জন্য তাঁকে করতে হয়েছে বহু সংগ্রাম। মুক্তামনির প্রথম জীবন কেটেছে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে। বুক অফ অ্যাচিভার্সে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, তিনি ১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

তিনি তাঁর বিধবা মায়ের কাছে বড় হয়ে ওঠেন। মাত্র ১৬-১৭ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। মুক্তামনির মোট চার সন্তান। সন্তানদের দেখভাল ও পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি দিনের বেলা ধানক্ষেতে কাজ করতেন এবং সন্ধ্যায় সবজি বিক্রি করতেন।

প্রায় ৩ দশক আগে, ১৯৮৯ সালে মুক্তামনি দেবীর অবস্থা এমন ছিল যে, মেয়ের জন্য জুতো কেনার সামর্থ্যও ছিল না তাঁর। ঐ সময় মুক্তামনি দেবীর দ্বিতীয় কন্যার জুতোর সোল ছিঁড়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায়, মুক্তামনি পশম দিয়ে একজোড়া সোল তৈরি করেন এবং ঐ জুতোটা পরার উপযোগী করে তোলেন।

Muktamani news

এদিকে, তাঁর মেয়ে প্রথমে ওই জুতো পরে স্কুলে যেতে ইতস্তত বোধ করছিল কারণ সে ভয় পেয়েছিল যে, সে হয়তো শিক্ষকের দ্বারা তিরস্কৃত হবে। তবে, পরের দিন যখন তাঁর মেয়ে স্কুলে যায় তখন শিক্ষক তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, কে তার এই জুতো তৈরি করেছে? পাশাপাশি, ওই শিক্ষকও ঠিক ঐরকম এক জোড়া জুতো চেয়ে বসেন। আর এই ঘটনার পর থেকেই মুক্তামনির ভাগ্য বদলে যায়।

পাশাপাশি, বেশি টাকা রোজগারের জন্য মুক্তামনি রাতে ব্যাগ ও হেয়ারব্যান্ড তৈরী করতে থাকেন। এভাবেই ধীরে ধীরে তিনি ব্যবসায়িক জীবনে প্রবেশ করেন এবং পরিবার ও সন্তান সামলেও তাঁর কোম্পানিকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যান। বর্তমানে “মুক্তা ইন্ডাস্ট্রিজ”-এর তৈরি জুতো শুধু ধুলো বা তাপমাত্রার প্রভাব থেকেই রক্ষা করে না বরং সেগুলি সহজেই ধুয়ে শুকনোও করা যায়।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর