বাংলাহান্ট ডেস্ক: পরিশ্রমই সাফল্যের (Success Story) চাবিকাঠি— এই কথাটিকে সত্যি করে দেখিয়েছেন রাজস্থানের বারমের জেলার শ্রবণ কুমার মাহেশ্বরী। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া শ্রবণ আজ কোটি টাকার সাম্রাজ্যের মালিক। তাঁর তৈরি সংস্থা ‘মহেশ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি’ আজ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে পণ্য রফতানি করে। বছরে সংস্থার টার্নওভার ২৫০ কোটি টাকারও বেশি। অথচ এক সময় তাঁর হাতে ছিল না কোনও ডিগ্রি, না কোনও মূলধন— ছিল শুধু অক্লান্ত পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্ন দেখার সাহস।
পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে ব্যবসায়ে কোটি টাকার সাফল্য (Success Story):
১৯৭১ সালের ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের পর শ্রবণ কুমার ও তাঁর পরিবার পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ থেকে ভারতে চলে আসেন। ১৯৭২ সালে তাঁরা বারমেরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তখন তাঁদের অবস্থান ছিল একেবারে শূন্য থেকে। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় বারমের শহরের স্টেশন রোডে একটি ছোট্ট মুদি দোকান দিয়ে। প্রথমে তিনি মণিহার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করতেন, পরে খুলেছিলেন তেলের দোকান। গ্রাহকদের সঙ্গে সততা ও গুণমানের সম্পর্ক গড়ে তুলেই ধীরে ধীরে ব্যবসার ভিত মজবুত করেন তিনি (Success Story)।
আরও পড়ুন:ভারতের এই সেক্টরই হয়ে উঠেছে কর্মসংস্থানের “ফ্যাক্টরি”! ৬ বছরে ৪ কোটি চাকরি, প্রকাশ্যে রিপোর্ট
২০০১ সালে শ্রবণ কুমারের জীবনে আসে এক বড় মোড়। তিনি তেল ও মুদি ব্যবসা ছেড়ে গুয়ার গাম (Guar Gum) শিল্পে প্রবেশ করেন। গুয়ার গাম একটি প্রাকৃতিক পণ্য, যা খাদ্যপ্রসেসিং, কসমেটিকস, টেক্সটাইল এবং তেল অনুসন্ধান শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এই সিদ্ধান্তই বদলে দেয় তাঁর ভাগ্য। কঠোর পরিশ্রম, আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার মধ্য দিয়ে শ্রবণ কুমার তৈরি করেন ‘মহেশ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি’। প্রথম দিকে নানা চ্যালেঞ্জ এলেও তিনি হার মানেননি। গুণমান ও সময়মতো সরবরাহ— এই দুই নীতিতে অবিচল থেকে তৈরি করেন বিশ্বস্ত ক্রেতাদের এক বিশাল নেটওয়ার্ক (Success Story)।
বর্তমানে শ্রবণ কুমারের সংস্থা থেকে উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত গুয়ার গাম পাউডার রফতানি হয় জার্মানি, আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, চীন, জাপানসহ ৫০টিরও বেশি দেশে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের ISO ও FSSAI সার্টিফিকেশন রয়েছে। কারখানায় অত্যাধুনিক অটোমেটিক প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে এবং সেখানে শতাধিক মানুষ কাজ করেন— কৃষক, শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার ও বিপণনকর্মী সকলেই এর অংশীদার (Success Story)।

আরও পড়ুন: কেরিয়ারে এই প্রথম! ৩৮ বছর বয়সে ICC ODI র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে পৌঁছলেন রোহিত, গড়লেন ইতিহাস
শ্রবণ কুমার নিজেই বলেন, “১৯৭২ সালে যখন পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছিলাম, তখন হাতে কিছুই ছিল না, কিন্তু মন ভরা ছিল সাহসে। আমি বিশ্বাস করতাম— ডিগ্রি নয়, পরিশ্রমই সাফল্যের (Success Story) আসল চাবিকাঠি।”
আজ তাঁর সংস্থা শুধুমাত্র আর্থিক সাফল্যের (Success Story) নয়, সামাজিক উন্নয়নেরও প্রতীক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে গুয়ার সংগ্রহ করে তিনি তাঁদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করেছেন। বাডমেরের এক সাধারণ শরণার্থী পরিবার থেকে আন্তর্জাতিক শিল্পপতি হয়ে ওঠার এই গল্প অনুপ্রেরণা জোগায় অসংখ্য যুবককে— প্রমাণ করে দেয়, সাফল্যের কোনও শর্টকাট নেই, আছে শুধু অধ্যবসায়, সততা আর সময়ের সঠিক ব্যবহার।













