চিনা সংযোগ থাকার কারণে সিঙ্গাপুরের কোম্পানির কোটি কোটি টাকা ডুবিয়ে দিল ভারত

বাংলা হান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি ভারত জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ৫৪ টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু, চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করলেও উল্লেখযোগ্য ভাবে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি বিরাট বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পরে সিঙ্গাপুরের টেক জায়ান্ট SEA গ্রুপ একদিনে ১৬ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।

পাশাপাশি, SEA গ্রূপের নিউইয়র্কের স্টক রাতারাতি ১৮%- এরও বেশি নেমে গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই নিউ দিল্লি জনপ্রিয় গেম “ফ্রি ফায়ার” নিষিদ্ধ করেছিল, যা SEA গ্রুপকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। এদিকে, “ফ্রি ফায়ার”-এর উপর নিষেধাজ্ঞা ভারতের চিনা-অ্যাপ-নিষেধ নীতিতে একটি আমূল পরিবর্তন চিহ্নিত করেছে। এই প্রথমবার ভারত কোনো Non-Chinese কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করেছে শুধুমাত্র তার মধ্যে চিনের বিনিয়োগ রয়েছে বলে।

এদিকে, SEA গ্রূপ কোনো চিনা কোম্পানি নয়। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ফরেস্ট লি চিনে জন্মগ্রহণ করলেও বর্তমানে তিনি একজন সিঙ্গাপুরের নাগরিক। এমনকি, কোম্পানিটি নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত। কিন্তু কেন্দ্র এখনও অ্যাপটিকে বাদের তালিকায় রেখেছে কারণ কোম্পানির একটি বড় অংশ চিনা বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, চিনা টেক জায়ান্ট সংস্থা টেনসেন্ট গত মার্চ মাসে সিঙ্গাপুরের ফার্মে ২৩.৩% ভোটাধিকার দখল করেছে। এদিকে, SEA-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ফরেস্ট লি, টেনসেন্টের সাথে সম্মিলিতভাবে মোট ভোটিং ক্ষমতার ৫২% ধারণ করেন। এখান থেকেই দিল্লি বুঝতে পেরেছিল যে, কোম্পানিটি চিনে নিবন্ধিত না হলেও, “ফ্রি ফায়ার”-এর ক্ষেত্রে প্রচুর চিনা সংযোগ রয়েছে।

এদিকে, বিশ্বের প্রযুক্তির বাজারে ভারতের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে স্টার্ট-আপগুলির জন্যও ভারতের বাজারের গুরুত্ব রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে “ফ্রি ফায়ার”কে দেখলেই বোঝা যায় যে, গেমটি ২০২১ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতে সর্বাধিক উপার্জনকারী মোবাইল গেম ছিল।

পাশাপাশি, বর্তমানে SEA গ্রুপ আশঙ্কা করছে যে, ভারতে অ্যাপের নিষেধাজ্ঞা অন্যান্য পরিষেবাগুলিতেও প্রসারিত হতে পারে। ইতিমধ্যেই ওই গ্রূপের ই-কমার্স ব্যবসায়িক শাখা “Shopee”-ও নয়াদিল্লির নজরে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থা। এদিকে, উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরাও সে কারণেই সিঙ্গাপুরের এই সংস্থা থেকে থেকে তাঁদের অর্থ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।

images 7 8

পাশাপাশি, SEA গ্রুপের “ফ্রি ফায়ার” নিষিদ্ধ করে নয়াদিল্লি বিশ্বের সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী টেক জায়ান্টদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। ভারতের বাজারে ঢুকতে গেলে চিনা বিনিয়োগকারীদের থেকে যে দূরে থাকতে হবে তা বর্তমানে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি, সংস্থাগুলিও বুঝতে পারছে যে, তাঁদের হয় চিনা বিনিয়োগকারী কিংবা ভারতের বাজার, যে কোনো একটিকেই বেছে নিতে হবে।

যদিও, SEA গ্রূপ সম্প্রতি এই ঘটনাটি বুঝতে পেরেছিল। কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই টেনসেন্টের ভোটিং শেয়ার ১০%-এর কম করার ব্যবস্থা করছিল। কিন্তু, টেনসেন্টের করা বিনিয়োগ থেকে রেহাই পাওয়ার আগেই কোম্পানিটি দিল্লির নজরে পড়ে যায়।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর