বাংলা হান্ট ডেস্ক: কোনো লক্ষ্য স্থির করে সেটি পূরণের জন্য সঠিক পরিশ্রম করে গেলেই পাওয়া যায় সফলতা। আর এই চিরসত্যকেই ফের আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন অল্পেশ রাঠোড়। একটা সময়ে বাবার ফুচকার দোকানে প্লেট পরিষ্কার করার কাজ করতে হত তাঁকে। কিন্তু, সমস্ত প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে রেখেই তিনি তৈরি করেছেন এক অনন্য সফলতার কাহিনি (Success Story)। শুধু তাই নয়, ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (NEET) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, অল্পেশ এখন মানবশরীরের হৃৎপিণ্ড থেকে ব্লকেজ দূর করার স্বপ্ন দেখছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গুজরাটের আরাবল্লি জেলার অন্তর্গত মেঘরাজ নামের একটি ছোট শহরের ফুচকা বিক্রেতার ছেলে অল্পেশ শীঘ্রই ডাক্তারি পড়ার জন্য একটি সরকারি কলেজে ভর্তি হতে চলেছেন। সম্প্রতি তিনি NEET পরীক্ষায় ৭০০-র মধ্যে ৬১৩ নম্বর পেয়েছেন। এমতাবস্থায়, অল্পেশ ডাক্তারি পড়ে ভবিষ্যতে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হতে চান। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “আমি কার্ডিওলজিতে বা নিউরোলজিতে কেরিয়ার গড়তে চাই।”
এদিকে, অল্পেশ তাঁর গ্রাম কেন্থওয়ার প্রথম চিকিৎসক হতে চলেছেন। তিনি বলেছেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত তাঁকে তাঁর বাবা রাম সিংয়ের সাথে ফুচকা এবং মশলা তৈরিতে সাহায্য করার জন্য প্রতিদিন ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে উঠতে হত। এরপরে, তাঁকে ফুচকার স্টলটি সাজাতে হত। স্কুল শেষ করার পর সন্ধ্যায়, অল্পেশ ফুচকা বিক্রি করতেন এবং গ্রাহকদের এঁটো বাসনপত্রও ধুতে হত তাঁকে।
শিক্ষকরা তাঁকে সাহায্য করেছেন: পড়াশোনায় অল্পেশ বরাবরই মেধাবী ছিলেন। তিনি দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৩ শতাংশ নম্বর পান। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার শিক্ষক রাজু প্যাটেল এবং তাঁর স্ত্রী আমাকে আমার কেরিয়ারের বিষয়ে অনেক বিকল্পের খোঁজ দিয়েছেন। তবে, আমি প্রথম থেকেই মেডিসিনের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছি। কারণ আমার বাবা দৃষ্টিশক্তি হারানোর সাথে লড়াই করছেন। এরপরে আমার লক্ষ্য ছিল এমবিবিএস-এর প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য।”
উল্লেখ্য যে, অল্পেশের বাবার মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা। যার কারণে পরিবারে চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। এমন পরিস্থিতিতে, NEET-এর কোচিংয়ের জন্যও অল্পেশকে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যদিও, তাঁর বাবা-মা সমস্ত আর্থিক প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে রেখে অল্পেশের কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেন।
এদিকে, ইতিমধ্যেই তাঁর এই দারুণ সাফল্যের প্রসঙ্গে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করেছে নেটমাধ্যমে। যেখানে বাবা-মায়ের সাথে দেখা গিয়েছে অল্পেশকে। পাশাপাশি, তিনি জানিয়েছেন, “আমার মতো দরিদ্র ছাত্রদের জন্য, শিক্ষা হল নিজেদের এবং তাদের পরিবারকে দারিদ্রতা থেকে বের করে আনার একটি অস্ত্র। আমি রোজগার শুরু করলে মা-বাবাকে ভালোভাবে রাখতে পারব। তাঁদের অনেক কিছু প্রাপ্য রয়েছে।”