জলের সাহায্যেই উড়ল স্যাটেলাইট! বিশ্বে প্রথমবার এমন কান্ড ঘটিয়ে তাক লাগাল SpaceX

বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল স্পেসএক্স (SpaceX)। জানা গিয়েছে, সংস্থাটি তার ট্রান্সপোর্টার-৬ মিশনের (Transporter 6 Mission) মাধ্যমে আমেরিকার বেসরকারি মহাকাশ কোম্পানি Momentus Inc-এর জলের সাহায্যে উড়তে সক্ষম স্যাটেলাইটটি মহাকাশে স্থাপন করেছে। এই স্যাটেলাইটের নাম হল ভিগোরাইড-৫ (Vigoride-5)। এটিতে বসানো হয়েছে ওয়াটার প্লাজমা থ্রাস্টার প্রযুক্তি। এমতাবস্থায়, এটাই হল একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক তৈরি করা বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইট যেটি জলের মাধ্যমেই উড়তে সক্ষম।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (Lower Earth Orbit) ভিগোরাইডকে মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি, সেটির সোলার প্যানেলও খুলে গেছে। সেগুলি থেকেই শক্তি তৈরি করে নিজের ব্যাটারি চার্জ করছে স্যাটেলাইটটি। তবে, সংস্থাটি ভিগোরাইডকে Vigoride Orbital Service Vehicle (OSV) বলে অভিহিত করেছে। ভবিষ্যতে পুরোনো স্যাটেলাইট মেরামতির কাজও করবে এটি।

এই স্যাটালাইটে মাইক্রোওয়েভ ইলেক্ট্রোথার্মাল থ্রাস্টার (MET) লাগানো রয়েছে। এই থ্রাস্টারে জল জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি, এই থ্রাস্টারগুলিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে এগুলির অগ্রভাগ থেকে এত বেশি গতিতে গ্যাস নির্গত হয় যে সেখান থেকেই গতি লাভ করা যায়। শুধু তাই নয়, MET-তে, জল থেকে প্লাজমা প্রস্তুত করা হয়। তারপর মাইক্রোওয়েভ শক্তি ব্যবহার করে, স্যাটেলাইটটি সামনের দিকে চালিত হয়।

উল্লেখ্য যে, গত বছর নাসা একই ধরণের পরীক্ষা করেছিল। মূলত, নাসা স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেট থেকে V-R3x নামে একটি কিউবস্যাট উৎক্ষেপণ করে। সেটিও ছিল জলের সাহায্যে উড়তে সক্ষম উপগ্রহ। পাশাপাশি, অটোনোমাস রেডিও নেটওয়ার্কিং এবং নেভিগেশনে সাহায্য করার জন্য কিউবস্যাট তৈরি করা হয়েছিল।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, যখনই স্যাটেলাইটের জ্বালানির কথা বলা হয়, প্রথমেই সেগুলির বিপদগুলি খতিয়ে দেখা হয়। যেমন সেটির বিষাক্তের পরিমান, দাহ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলিতে নজর দেওয়া হয়। তবে ভবিষ্যতে জলের সাহায্যে উড়তে সক্ষম স্যাটেলাইটগুলিতে এমন কোনো বিপদ হবে না। পাশাপাশি, স্যাটেলাইটগুলি একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলেও বিস্ফোরণ হবে না।

কিউবস্যাটের প্রপালশন সিস্টেমে এই ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। যার ফলে তার ভিতরে থাকা জল থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন কণা ভেঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তির জোগান দিয়েছিল। পাশাপাশি, কিউবস্যাটের সোলার প্যানেলগুলি সূর্যের রশ্মি থেকে শক্তি নিয়ে প্রপালশন সিস্টেমে শক্তি পাঠাত, যাতে জল থেকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন কণা আলাদা করা যায়।

এদিকে, জল বিষাক্ত নয়। পাশাপাশি, এটি দাহ্যও নয় এবং এটি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় স্থিতিশীলও বটে। তাই এই ধরণের জ্বালানির সাহায্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সাশ্রয়ী হয়ে উঠবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আমরা বিনামূল্যেই জল পেতে পারি। তাই এটির ব্যবহারে কোনো লোকসানের আশঙ্কাও নেই।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর