বাংলাহান্ট ডেস্ক: সুশান্ত সিং রাজপুতের (sushant singh rajput) মৃত্যুর পর বলিউড ইন্ডাস্ট্রির নানা লুকনো দিক প্রকাশ্যে এসেছে। ইন্ডাস্ট্রির নেপোটিজম, ‘বুলিং’ এইসব বিষয় চর্চায় উঠে এসেছে। বহু তারকাই মুখ খুলেছেন বিষয়গুলি নিয়ে।
এবার টলিউডে (tollywood) স্বজন পোষন (nepotism) নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র (sreelekha mitra)। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও বার্তায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (prasenjit chatterjee), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর (rituparna sengupta) মতো টলিউড ইন্ডাস্ট্রির হেভিওয়েটদের উদ্দেশে তোপ দাগেন তিনি। সুশান্ত সিং রাজপুতের মর্মান্তিক পরিণতির কথা বলতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন শ্রীলেখা। তিনি দাবি করেন, ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর কেউ নেই। নিজের যোগ্যতায় জায়গা কায়েম করেছেন। অভিনয়টাকে ভালবেসেই কাজ করেছেন।
শ্রীলেখা জানান, তিনি পড়াশোনায় খারাপ ছিলেন না। প্রথমে উড়িয়া ছবি, ধারাবাহিক দিয়ে কাজ শুরু করেন। কিন্তু প্রথমেই ছবিতে সুযোগ পাননি তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, “এখানে ক্ষমতা কথা বলে। শুধুমাত্র যে মেয়েরাই হেনস্থার শিকার হন তা নয়, ছেলেরাও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। মিটু, কাস্টিং কাউচ সবই ক্ষমতার অপব্যবহার। ক্ষমতাশীল নায়ক, পরিচালক, প্রযোজকরা ইচ্ছামতো ক্ষমতা ব্যবহার করেন। যাদের বাবা মা কেউ ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন না তাদের পক্ষে এখানে টিকে থাকা খুবই মুশকিল। আগে এখনকার মতো সিরিয়াল থেকে সুযোগ পাওয়া যেত না।”
শ্রীলেখা আরও বলেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে গডফাদার খুব গুরুত্বপূর্ণ। যারা কোনও কিছুর বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেন। আমার সেই কোনও গডফাদার ছিল না। সেসময় প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিত, তাপস দা রাই ইন্ডাস্ট্রি চালাত। কিন্তু বুম্বাদা ছিলেন নাম্বার ওয়ান। সেসময় আমার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নায়িকার চরিত্র দেওয়া হত না। কারন তখন ঋতুপর্ণার সঙ্গে প্রসেনজিতের প্রেম চলছে। ঋতুপর্ণা দেরি করে এসেও নায়িকার রোল পেয়ে যেতেন। সেজন্য টেলিভিশনে কাজ শুরু করি। আমার তো কোনও পরিচালক প্রযোজকের সঙ্গে প্রেম হয়নি। কে দেবে আমায় কাজ? তাছাড়া আমি ট্যারা কথা বলি, সুন্দরী হওয়ার সুযোগও নিই না।”
অভিনেত্রী আরও জানান, সাগর বন্যা নামে এক ছবির শুটিং চলাকালীন তিনি ও তাঁর মা দুর্ঘটনার শিকার হন। ছবির পরিচালক তাঁকে হাসপাতালে দেখতে আসলেও প্রসেনজিৎ আসেননি। দুর্ঘটনার কারনে অশোক ধানুকার একটি ছবি হাতছাড়া হয়ে যায় শ্রীলেখার। অভিনেত্রী অভিযোগ করেন, ছবির ‘সাইনিং অ্যামাউন্ট’ও পাননি তিনি। পরে অন্য একটি ছবিতে অশোক ধানুকা তাঁকে সই করানোর সময় বলেন, প্রসেনজিৎ শ্রীলেখার সঙ্গে অভিনয় করবেন না বলেছেন। কারন তাঁকে দেখতে কেউ সিনেমাহলে যাবে না।
ক্ষুব্ধ শ্রীলেখা জানান, এরপর তিনি স্টুডিওতে প্রসেনজিৎকে এড়িয়ে যান। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন ছবিতে তাঁকেই নেওয়া হচ্ছে। কারন তখন প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। শ্রীলেখা আরও অভিযোগ করেন, এরপরে অর্জুন চক্রবর্তীর সঙ্গে একটি ছবিতেও ঋতুপর্ণা তাঁর নাম বাদ দেওয়ার দাবি করেছিলেন। কিন্তু অর্জুন চক্রবর্তী শোনেননি।
পাশাপাশি সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতেও কাজ না পাওয়ার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রীলেখা। অভিনেত্রীর অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনি সাফ জানিয়েছেন, ২০০১-২০১৫ পর্যন্ত প্রসেনজিৎ ও তাঁর জুটির কোনও ছবি হয়নি। তা সত্ত্বেও ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি।
অপরদিকে অশোক ধানুকা জানান, সে সময় মানুষ যাদের দেখতে চাইত তাদেরকেই ছবিতে কাস্ট করা হত। শ্রীলেখা নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেননি বলেই তাঁর ওপর ভরসা করতে পারেননি তিনি। কিন্তু কাকে ছবিতে নেওয়া হবে না হবে তা প্রসেনজিৎ কোনও দিনই ঠিক করে দেননি বলে দাবি করেন অশোক ধানুকা। তবে এই প্রসঙ্গে এখনও মুখ খোলেননি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।