বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে ভারতকে “সেমিকন্ডাক্টর হাব” গড়ে তোলার লক্ষ্যে একের পর এক বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই দেশে সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফাকচারিং ইউনিটও স্থাপন করা হচ্ছে। এই আবহে UBS-এর এক রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প ১০৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। জানিয়ে রাখি যে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ সেমিকন্ডাক্টর ইঞ্জিনিয়ার ভারতে নিযুক্ত রয়েছেন। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই চিপ ফ্যাব্রিকেশন এবং প্যাকেজিং-টেস্টিংয়ের (OSAT) ক্ষেত্রেও ভারত দ্রুত এগিয়ে চলেছে। মূলত, সরকারের “মেক ইন ইন্ডিয়া চিপস” নীতি, ৭৬,০০০ কোটি টাকার PLI স্কিম এবং ISM স্কিম এই সেক্টরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। টাটা থেকে শুরু করে মাইক্রোন, রেনেসাসের মতো কোম্পানিগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরি হয়েছে এবং শেয়ার বাজারে লিস্টেড কোম্পানি এই দৌড়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের কাছে ঠিক সেইরকমই ৪ টি কোম্পানির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যেগুলি সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে অগ্রগতির মাধ্যমে শেয়ার বাজারে (Share Market) বিনিয়োগকারীদের লাভবান করতে পারে।
শেয়ার বাজারে (Share Market) নজর কাড়তে পারে এই ৪ টি কোম্পানির স্টক:
১. সিজি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস: জানিয়ে রাখি যে, সিজি পাওয়ার, তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিজি সেমি প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে, গুজরাটের সানন্দে ২ টি OSAT ফেসিলিটি; G1 এবং G2 স্থাপনের ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি রেনেসাস ইলেকট্রনিক্স এবং স্টারস মাইক্রোইলেকট্রনিক্সের সঙ্গে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার গঠন করেছে এবং আগামী ৫ বছরে ৭,৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে। G1 ইউনিটটি চলতি বছরের ২৮ অগাস্ট চালু করা হয় এবং এর দৈনিক ৫০০,০০০ ইউনিট উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। এদিকে, G2 ইউনিট সম্পন্ন হওয়ার পর, উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ১৪.৫ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত হবে। কোম্পানিটি শেয়ার বাজার থেকেও লাভবান হয়েছে। G1 ইউনিট চালু হওয়ার পর, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে এই কোম্পানির শেয়ার ৬৬৪ টাকা থেকে বেড়ে ৭৯২ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বর্তমানে এই শেয়ারের (Share Market) দাম ৭২৩.৬০ টাকা।

২. কেইনস টেকনোলজি ইন্ডিয়া লিমিটেড: মহীশুরে স্থিত এই কোম্পানিটি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিসেস (EMS) সরবরাহকারী। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, এটি কেইনস সেমিকন প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসায় প্রবেশ করে। গুজরাটের সানন্দে ৩,৩০৭ কোটি টাকার একটি OSAT ফেসিলিটি তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৩ টি অ্যাসেম্বলি লাইন এবং কো-প্যাকেজড অপটিক্সের জন্য একটি R &D লাইন রয়েছে। সরকার ISM স্কিমের অধীনে এটি অনুমোদন করেছে। এই শেয়ারের স্টকের গতিও চিত্তাকর্ষক। ২০২৩ সালে ১,০০০ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া এই শেয়ারটি (Share Market) ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৭,৮২২ টাকার সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছিল। এটি গত ১ বছরে ২৬ শতাংশেরও বেশি রিটার্ন দিয়েছে এবং বর্তমানে ৬,৬৮৯ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
আরও পড়ুন: এখনও বজায় উৎসবের মরশুম! আগামী সপ্তাহে ৫ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক, দেখুন ছুটির তালিকা
৩. জুবিল্যান্ট ইনগ্রেভিয়া লিমিটেড: এই কোম্পানিটি সরাসরি চিপ তৈরি করে না। তবে সেমিকন্ডাক্টর কারখানাগুলিতে আল্ট্রা হাইি পিউরিটি কেমিক্যালস সরবরাহ করে। এই কোম্পানির ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছে TSMC, ইন্টেল, টাটা এবং মাইক্রন। এই সংস্থাটি একটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। গত বছর ধরে এই সংস্থার শেয়ারে প্রায় ৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত শেয়ারটি ১৭.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে এই শেয়ার ৬৭৯ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। যার P/E অনুপাত ৩৮।
৪. ইউনিমেক অ্যারোস্পেস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড: বেঙ্গালুরুতে স্থিত এই কোম্পানিটির সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব টুলস এবং প্রোডাকশন মেশিনারি সাপ্লাই চেনে শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করছে। এটি ওয়েফার হ্যান্ডলিং, এচিং চেম্বার এবং লিথোগ্রাফি মেশিনের জন্য নির্ভুল উপাদান এবং সাব অ্যাসেম্বলিজ তৈরি করে। কোম্পানির প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে CNC মেশিনিং এবং মাইক্রো-সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং। গত বছর এই কোম্পানির শেয়ারে (Share Market) ২৫ শতাংশের পতন ঘটেছে। কিন্তু গত ৫ টি সেশনে এই শেয়ার ৯ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ১০৩৫ টাকায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: ৭ ম্যাচ, ০ জয়! মহিলা বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পারফরম্যান্সে হতাশ নকভি, বড় সিদ্ধান্ত নিল PCB
১০৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছনোর অনুমান করা হচ্ছে: জানিয়ে রাখি যে, বর্তমানে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ডিজাইন থেকে শুরু করে উৎপাদন এবং প্যাকেজিং পর্যন্ত এই সেক্টর ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ১০৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। টাটা, মাইক্রোন, সিজি পাওয়ার এবং কেইনসের মতো কোম্পানিগুলি এই সেক্টরে গতি বৃদ্ধি করে ভারতকে বিশ্বব্যাপী চিপ উৎপাদনের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকির। তাই, বিনিয়োগের আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করুন।













