বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ইন্দোর (Indore), বিগত ৩ বছরে সবথেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছে। এই অঞ্চলেরই তিন তরুণ তাঁদের অসাধারণ সাফল্যের জন্য, বিশ্বে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিয়েছে। বায়ু দূষণ নির্মূলের জন্য বানিয়েই ফেললেন বিশ্বের প্রথম অসম্পূর্ণ আউটডোর এয়ার পিউরিফায়ার। এই তিন বন্ধুর স্বপ্ন প্রতিটি শহর দূষণমুক্ত হোক। খাঁটি বাতাস গ্রহণ প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তারা
গগন ত্রিপাঠি, দিব্যঙ্ক গুপ্ত এবং হর্ষ নিখরা তিন বন্ধু মিলেই করে ফেললেন অসাধ্য সাধন। ছাত্রবস্থা থেকেই তারা নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখত। এমন কিছু, যা সমগ্র বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পরবর্তী সময়ে নভোর্বিস গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান হন হর্ষ নিখরা, কারিগরি ও উৎপাদন বিভাগের প্রধান হয়ে ওঠেন গগন ত্রিপাঠি এবং বিপণন ও পরিচালন বিভাগের প্রধান হন দিব্যঙ্ক গুপ্ত।
দূষণ হাটাতে কিছু একটা করতেই হবে
পরীক্ষার সময় একদিন যমুনা এক্সপ্রেস হাইওয়ের একটি সড়ক দুর্ঘটনার ভিডিও তাঁদের হাতে আসে। বায়ু দূষণের ফলে মোট ১৩ টি গাড়ির দুর্ঘটনায় এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছিল, গাড়ির মধ্যে থাকা মানুষজন বাইরে বেরোতে পারছিল না। এই ভিডিও দেখার পরই তারা ঠিক করলেন, এই দূষণ সম্পর্কিত একটা কিছু করতে চায় তারা।
শুরু হয় এয়ার পিউরিফায়ার বানানোর কাজ
যেমন ভাবা তেমনই কাজ, তারা এয়ার পিউরিফায়ার বানানোর কাজে ব্রতী নেয়। এই ভাবে তাঁদের গবেষণার জন্য ২০১৮ সালে ৯ মাসের জন্য একটি ঘরভাড়াও নেন। কলেজ শেষে তারা সেখানে একত্রিত হয়ে গবেষণার কাজ করতেন।
প্রথমে তারা বায়ু পরিশোধক তৈরি করেছিলেন, যা পুরোপুরি শূন্য বর্জ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে করতে তারা সম্পূর্ণ এয়ার পিউরিফায়ার বানাতে সক্ষম হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এটি প্রথম বাজারে আসে। এখনও অবধি প্রায় ৮০ হাজার টাকার এয়ার পিউরিফায়ার বিক্রি হয়েছে।
তাঁদের সাফল্য ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে
বর্তমান দিনে এই যুবকরা শিল্প, কর্পোরেট অফিস, উদযাপন এবং ভিড় জড়িত জায়গাগুলিতে ব্যবহারের জন্য বায়ু বিশোধক সরঞ্জাম তৈরি করছে। আউটডোর পিউরিফায়ার তৈরির পাশাপাশি ৫ টি পণ্যের ভেরিয়েন্টে কাজ করছে। পোর্টেবল বায়ু পরিশোধন সিস্টেমের জন্যও কাজ করছে। তাঁদের এই প্রচেষ্টা দিল্লির প্রগতি ময়দানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
‘নোভারবিস আইটিআইএস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি স্টার্টআপ শুরু করেছেন তারা। এই যুবকরা বৈদ্যুতিন-ফোটোনিক স্টিমুলাস ডিটক্সিফিকেশন প্রযুক্তির সাহায্যে এমন কিছু আবস্কার করেছে, যা বাতাসের দূষণকে পরিস্রুত করে তোলে। ব্যস্ত রাস্তায় সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দূষিত ধোঁয়া যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে না পারে, সেই জন্য তাঁদের আবিষ্কার কাজে লাগানো হয়।
দূষিত ধোঁয়াকে করল কালিতে রূপান্তর
এবিষয়ে গগন ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, ‘ডিজেল জেনারেটরের কারণে শহরে দূষণ প্রায় ৩০% -৪০% বৃদ্ধি পায়। তাই আমরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি ডিভাইস তৈরি করি। যা বায়ুর দূষিত ধোঁয়াকে কালিতে রূপান্তরিত করবে। এবং যা পরবর্তীতে ব্যবহারও করা যাবে’।
সমগ্র বিশ্বে তাঁদের সাফল্য
এই তিন বন্ধু ভারত সরকারের মানবসম্পদ মন্ত্রক কর্তৃক দেশের শীর্ষ ১০ জন উদ্ভাবকের তালিকায় যোগদান করে, পুরস্কার অর্জন করে নিয়েছে। ‘গ্লোবাল ইনোভেটর ফেস্টা’-তে নির্বাচিত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সুযোগও পায় তারা। পাশাপাশি ইউএনডিপি এবং এনআইটিআই আইয়্যাজ আয়োজিত ‘জাতীয় উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ’-এ তিনি প্রথম পুরষ্কারও পেয়ে এই যুবকরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগও পেয়েছে। আবার ইন্দোরের অ্যাসোচাম স্টার্টআপ লঞ্চপ্যাড সিরিজও জিতেছেন তারা। এমনকি ‘ইও-গ্লোবাল স্টুডেন্ট এন্টারপ্রেনার অ্যাওয়ার্ড’ জয়ের গৌরবও রয়েছে তাঁদের ঝুলিতে।