পরীক্ষা বাতিলের জেরে অবসাদ, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা দিনহাটার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ করোনার কারণে প্রায় বছর দেড়েক ধরে বন্ধ হয়ে আছে স্কুল। নাজেহাল অবস্থা শিক্ষা ব্যবস্থারও। মাঝখানে কিছুদিন স্কুল খুললেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ফের একবার তা বন্ধ করতে হয়েছে। তার উপর করোনার প্রভাব পড়েছে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও। গতকালই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরীক্ষাগুলির সাথে যুক্ত প্রায় ২২ লক্ষ ছাত্র ছাত্রীর ভবিষ্যৎ। আর সেই কারণেই তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায়নি রাজ্য। প্রথমে পরীক্ষার পক্ষে থাকলেও পরে গঠন করা হয় বিশেষজ্ঞ কমিটি। এমনকি ইমেইল মারফত সাধারণ মানুষের কাছেও মতামত চেয়েছিল সরকার। তাদের ৮৩ শতাংশ মানুষ পরীক্ষা না হওয়ার পক্ষে রায় দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার।

কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষাই জীবনের প্রথম বড় ধাপ। এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই জীবনের আগামী দিনের পথ নির্বাচন করে ছাত্র ছাত্রীরা। সেই পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে অনেকে। এবার সেই অবসাদই হয়ে দাঁড়ালো মৃত্যুর কারণ। পরীক্ষা বাতিলের কথা শুনে অবসাদগ্রস্ত হয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করল এক ছাত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের আমবালি এলাকার ছোট আটিয়াবাড়ী অঞ্চলে। ১৬ বছরের ওই কিশোরী ছাত্রীর নাম বর্ণালী বর্মন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিল এই বর্ণালী। পরিবার সূত্রে খবর দিনরাত তার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান ছিল পড়াশোনা। বড় হয়ে আসলেই সে দাঁড়াতে চেয়েছিল বাবার পাশে।

পরিবারের আশা ছিল, এই বছর মাধ্যমিকে এক থেকে দশের মধ্যে স্থান ঠিকই অর্জন করবে বর্ণালী। কিন্তু হঠাৎই শেষ হয়ে গেল সমস্ত স্বপ্ন। কাল টিভিতে খবর দেখার পরেই বাবা-মাকে সে জানায়, ‘তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না’। আর তারপরেই নিয়ে বসে জীবনের এক চরম কঠিন সিদ্ধান্ত। বিকেলের দিকে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় বর্ণালী। পরিবারের লোকজন তখন ততটা পাত্তা না দিলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত দরজা খুলছে না দেখে সন্দেহ হয় তাদের। এরপর ডাকাডাকি করেও সাড়া না মিললে ভেঙে ফেলা হয় দরজা। দেখা সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে বর্ণালীর মৃতদেহ।

লাল কালিতে লেখা এক চিঠিতে বর্ণালী লিখেছে, ”তোমার সব কাজের দায়িত্ব নিতে পারলাম না বাবা।” ইতিমধ্যেই দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে দিনহাটার পুলিশ। এই ঘটনায় মর্মান্তিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন বর্ণালীর বাবা ও মা। বর্ণালীর বাবা জানান, “সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি তারা যেন বিচার করেন। এমন ঘটনা আর কারও সঙ্গে যেন না ঘটে।”

প্রতিবছর মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরে এমন কিছু ঘটনা বারবারই সামনে আসে। জীবনের প্রথম ধাপে সফলতা না পাওয়ায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেকেই। একই ঘটনা ঘটালো বর্ণালীও। আবারও মৃত্যু হল আরেকটি অপূর্ণ স্বপ্নের।


Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর