বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনে সফল হওয়ার পথ কখনোই মসৃণ নয়। বরং, তা প্রতিটি পদক্ষেপেই হয় কন্টকাকীর্ণ। এই কঠিন সফরে যাঁরা সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থাকেন তাঁরাই তৈরি করেন অনবদ্য সফলতার কাহিনি (Success Story)। যা উদ্বুদ্ধ করে বাকিদেরও। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একজনের সাফল্যের কাহিনি উপস্থাপিত করব যিনি তাঁরা জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন। মূলত, আজ আমরা আপনাদের জানাবো এবি ডমিনিকের প্রসঙ্গে। যিনি সবসময় বড় কিছু করতে চাইতেন। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে “হাই লাইফ এক্সিবিশনস” কোম্পানির মাধ্যমে। যেটি ২০১৩ সালে একটি ছোট ঘর থেকে শুরু হয়েছিল।
এবি ডমিনিকের সাফল্যের কাহিনি (Success Story):
জানিয়ে রাখি যে, ডমিনিকের এই সংস্থাটি ফাইভ স্টার হোটেলগুলিতে প্রদর্শনীর আয়োজন করে। শুরুর দিকে সংস্থাটি কেবল এথনিক ওয়ার ডিজাইনারদের পণ্য প্রদর্শন করত। আজ এই সংস্থার প্রোডাক্ট রেঞ্জে রয়েছে বিয়ের পোশাক, ডিজাইনার আউটফিট, অ্যাক্সেসরিজ, গয়না এবং আরও অনেক কিছু। ডমিনিকের কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ৮০ কোটি টাকা। তিনি ভারত এবং বিদেশে ১০০০ টিরও বেশি প্রদর্শনী করেছেন।
“পড়াশোনা করতে ভালো লাগছিল না”: এবি ডমিনিক মূলত কেরালার কুম্ভজা শহরের বাসিন্দা। তাঁর বাবা ছিলেন এলআইসি এজেন্ট এবং মা ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। এবি ডমিনিকের শৈশব কেটেছে স্বাচ্ছন্দ্যে। তিনি প্রায়শই হোস্টেলে থাকতেন। তবে, পড়াশোনায় তাঁর খুব একটা আগ্রহ ছিল না। যদিও, বাস্কেটবল এবং ভলিবলের মতো খেলাধুলায় তাঁর প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। স্নাতকের পর এবি ডমিনিক কোলহাপুর থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন এবং স্বপ্নের শহর মুম্বাইতে চলে আসেন। তাঁর পেশাগত জীবন সেখান থেকেই শুরু (Success Story) হয়।
১৮ বছর চাকরির পর বড় সিদ্ধান্ত: মুম্বাইতে পৌঁছনোর পর, এবি একাধিক জায়গায় ছোটখাটো চাকরি করেন। তারপর একটি বিখ্যাত পাবলিশিং ফার্মে তিনি কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর চাকরি করেন। শুরুতে তাঁর বেতন ছিল মাত্র ৩,০০০ টাকা। কিন্তু, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ম্যানেজার পদে পৌঁছেছিলেন। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কোম্পানিতে কাজ করার সময় তার বেতন ২০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পায়। চাকরির সময়ে তিনি প্রদর্শনী এবং ইভেন্টস আয়োজনে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কিন্তু, ৯ টা ৫ টার চাকরি তাঁর পছন্দ ছিল না। তিনি তাঁর বাবার স্বাধীন জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, স্বপ্নপূরণের (Success Story) জন্য নিজস্ব কোম্পানি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
আরও পড়ুন: “আমি ভগবান শিবের ভক্ত, সমস্ত বিষ গিলে ফেলি”, বিরোধীদের কটূক্তির কড়া জবাব দিলেন মোদী
ব্যবসায়িক জগতে কীভাবে হয় শুরু: ২০১৩ সালে, এবি ডমিনিক তাঁর সঞ্চয় থেকে ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন। পাশাপাশি, তাঁর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে “হাই লাইফ এক্সিবিশনস” শুরু করেন। মুম্বাইতে একটি ছোট কিউবিকেল এবং মাত্র ২ জন কর্মচারী নিয়ে শুরু হওয়া তাঁর ওই কোম্পানি আজ একটি বড় নাম হয়ে উঠেছে। ডমিনিক তাঁর শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে, ক্রমাগত তাঁর কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনকুবেরদের তালিকায় ফের প্রথম স্থানে মাস্ক! কোথায় রয়েছেন আম্বানি-আদানি?
পৌঁছেছেন সাফল্যের শীর্ষে: এবি-র কোম্পানি এখনও পর্যন্ত ১০০০-এরও বেশি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাঁর কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ৮০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। মুম্বাই ছাড়াও, বেঙ্গালুরু থেকে শুরু করে আহমেদাবাদ, হায়দ্রাবাদ এবং কোচির মতো শহরেও তাঁর অফিস রয়েছে। তিনি ভারতের ৩৬ টি শহরে এবং মরিশাস, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। আজ ৪০ জনেরও বেশি ফুল টাইম এমপ্লয়ি এবং বিপুল সংখ্যক ফ্রিল্যান্সার তাঁর সংস্থায় কাজ করছেন। এছাড়াও, তিনি তাঁর স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে মুম্বাইয়ের একটি বিলাসবহুল পেন্টহাউসে থাকেন। পাশাপাশি, এবি ডমিনিক একাধিক দামি গাড়ি নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তাঁর এই সাফল্যের কাহিনি এটাই প্রমাণ করে যে, যদি দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিজের মধ্যে থাকে সেক্ষেত্রে যেকোনও লক্ষ্য পূরণ (Success Story) করা সম্ভব।