বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রতিটি কাজেই সফল হওয়ার ক্ষেত্রে করতে হয় কঠোর পরিশ্রম। শুধু তাই নয়, সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে সঠিকভাবে এগিয়ে গেলেই মেলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য (Success Story)। বর্তমান প্রতিবেদনেও আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একজনের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েও সাহসের সঙ্গে লড়ে গিয়েছেন। যার মাধ্যমে তিনি তৈরি করেছেন অনবদ্য সাফল্যের কাহিনি। মূলত, মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার কৃষক হৃষিকেশ জয়সিং ধানে খরার পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অ্যালোভেরা থেকে সাবান, শ্যাম্পু এবং জুসের মতো পণ্য তৈরি করে ৩.৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন। প্রতারিত হয়ে অ্যালোভেরা চাষ শুরু করার পর, হৃষিকেশ এই ব্যবসায় সফল হয়েছেন। এখন দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। এই প্রতিবেদনে আমরা হৃষিকেশের সাফল্যের কাহিনি উপস্থাপিত করছি।
অবাক করবে হৃষিকেশের সাফল্যের কাহিনি (Success Story):
একটা সময়ে পরার মতো জুতোও ছিল না: মূলত, মহারাষ্ট্রের এই কৃষক দারিদ্রের ভ্রুকুটিকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের কাজ করে গিয়েছেন। খরা-কবলিত সাতারা জেলার হৃষিকেশ জয়সিং ধানের পরিবার একসময় মাসিক ২,০০০ টাকার আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাঁর পরার জন্য জুতোও ছিল না। জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টকেই (খরা) সুযোগে পরিণত করেছিলেন হৃষিকেশের অধ্যবসায় এবং দূরদর্শিতা তাঁকে কেবল একজন সফল ব্যবসায়ীই (Success Story) করে তোলেনি, বরং সেই সকল মানুষের জন্যও তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন, যাঁরা মনে করেন ভাগ্য কেবল তাঁদেরই সহায় হয় যাঁদের টাকা আছে।
প্রতারণার শিকার হয়েও হাল ছাড়েননি: প্রায় দুই দশক আগে, মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার কৃষকদের অ্যালোভেরা চাষের জন্য লোভ দেখানো হয়। একজন প্রতারক তাঁদের বলেছিল যে, তাঁরা অ্যালোভেরা চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। এমতাবস্থায়, অনেক কৃষক অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু, ফসল কাটার সময় আসার সঙ্গে সঙ্গেই সেই প্রতারক উধাও হয়ে যায়। কৃষকরা সমগ্র পরিস্থিতি অনুধাবন করার পর সর্বশান্ত হয়ে ক্ষেত থেকে অ্যালোভেরা গাছ উপড়ে রাস্তায় ফেলে দিতে থাকেন। কিন্তু, হৃষিকেশ সাহস হারাননি। তিনি ওই ফেলে দেওয়া অ্যালোভেরা গাছগুলি তুলে তাঁর জমিতে রোপণ করেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, এই ফসল উইপোকা তাড়াতে সাহায্য করবে এবং তাঁর আম গাছগুলিকেও নিরাপদ রাখবে।
আরও পড়ুন: “Match should…”, এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিলের প্রসঙ্গে বড় সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের
কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা ভাগ্য বদলে দিয়েছে: হৃষিকেশ তাঁর জমিতে ৪,০০০ অ্যালোভেরা গাছ রোপণ করেছিলেন। এরপর, তিনি তাঁর দক্ষতার মাধ্যমে তিনি অ্যালোভেরা থেকে একাধিক প্রাকৃতিক পণ্য তৈরি শুরু করেন। যার মধ্যে ছিল সাবান, শ্যাম্পু এবং জুস। তিনি এই পণ্যগুলি থেকে লাভবান হন। কিন্তু তারপর তিনি তাঁর বাগানকে আরও কাজে লাগিয়ে অ্যালোভেরা থেকে প্রাকৃতিক কীটনাশক, ভেষজ স্প্রেডার এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, এই পণ্যগুলি কার্যকরভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: দুর্দান্ত জয় দিয়ে শুরু এশিয়া কাপের সফর! UAE-কে হারিয়েই বিপুল আর্থিক পুরস্কার পেল টিম ইন্ডিয়া
এখন কোটি কোটি টাকার ব্যবসা: জানিয়ে রাখি, ২০১৩ সালে হৃষিকেশ তাঁর পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করেন। আজ তাঁর ব্যবসা ৩.৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। যেটি থেকে ৩০ শতাংশ লাভ মিলছে। একটা পর্যায়ে হৃষিকেশের শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু, তিনি তাঁর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছে। আজ, যে কৃষকের পরার জন্য জুতো ছিল না, তিনি দোতলা বাড়িতে থাকেন এবং ফরচুনার গাড়ি চালান। হৃষিকেশের সাফল্যের কাহিনি (Success Story) এটাই প্রমাণ করে যে কেউ যদি নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমের সঙ্গে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকেন তাহলে তিনি নিশ্চিতরূপে সফল হতে পারবেন।