বাংলা হান্ট ডেস্ক: দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম এবং লক্ষ্যপূরণের জেদ বজায় থাকলেই পৌঁছে যাওয়া যায় সফলতার শীর্ষে। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন এক ব্যক্তির সফলতার কাহিনি উপস্থাপিত করব যাঁর জীবনকাহিনি অনুপ্রাণিত করবে সবাইকেই। মূলত, বিহারের (Bihar) সহরসা জেলার বাসিন্দা কমলেশ কুমারের প্রসঙ্গ এবার উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। কমলেশ ২০২২ সালে সম্পন্ন হওয়া Bihar Judiciary Exam-এ ৬৪ তম স্থান অর্জন করেছেন।
তাঁর এই বিরাট সাফল্যের পেছনে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে করে চলা কঠোর পরিশ্রম এবং তাঁর বাবার আত্মত্যাগ। জীবিকার তাগিদে তাঁর বাবা কখনও কুলির কাজ আবার কখনও রিকশা চালাতেন। পাশাপাশি, তিনি ঠ্যালা গাড়ি চালিয়ে খাওয়ারও বিক্রি করতেন। এমতাবস্থায়, একবার কমলেশের বাবার গায়ে হাত তোলেন এক পুলিশকর্মী। আর ওই ঘটনাটিই কমলেশের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
এই প্রসঙ্গে কমলেশ কুমার জানান, যে তাঁর বাবা সংসার চালাতে গিয়ে অত্যন্ত লড়াই করেছেন। তাঁর বাবার দশ ভাই-বোন। জীবিকার তাগিদে দিল্লিতে পাড়ি দিতে হয় তাঁদের। পাশাপাশি, একটা সময়ে বস্তিতেও থাকতে হয় কমলেশদের। যদিও, তখনই লালকেল্লার পিছনের বস্তিগুলি সরাতে সরকারের নির্দেশ আসে। শুধু তাও নয়, সমস্ত অবৈধ এবং অস্থায়ী বাড়িগুলিও ভেঙে ফেলা হয়
কমলেশের বাবাকে চড় মারেন এক পুলিশকর্মী: সেই সময়ে কমলেশের পরিবার অত্যন্ত সঙ্কটে পড়ে যায়। পাশাপাশি তাঁরা যমুনার ওপারে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। সেই সময়ে ঠ্যালা গাড়িতে ব্যবসা শুরু করেন তাঁর বাবা। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন কমলেশ একদিন তাঁর বাবার সাথে ব্যবসার কাজে সাহায্য করছিলেন। সেই সময়ে একজন পুলিশ তাঁর বাবাকে চড় মেরে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করেন।
ইউটিউব চ্যানেল জোশ টক-এ ঘটনাটি বর্ণনা করে কমলেশ জানান যে এই ঘটনাটি তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি বলেন, “তখন আমার খুব রাগ হয়েছিল কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। তারপর একদিন বাবা আমাকে বললেন, এই পুলিশরা বিচারকদেরকে খুব ভয় পান।” এমতাবস্থায়, কমলেশ তখন থেকেই মনে মনে বিচারক হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের লক্ষ্য স্থির করে নেন।
২০১৭ সালে, কমলেশ UP Judiciary-র পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি Bihar Judiciary-র পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু সেখানেও প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হন তিনি। তারপর করোনা মহামারী সামনে আসায় প্রায় ৩ বছর সময় নষ্ট হয় তাঁর। কিন্তু হাল ছাড়েননি কমলেশ। তিনি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অবশেষে তিনি ২০২২ সালে নির্বাচিত হন। এই প্রসঙ্গে কমলেশ জানান, তিনি যখন রেজাল্ট দেখতে গিয়েছিলেন, তালিকায় কোথাও তাঁর নাম দেখতে পাননি। হতাশ হয়ে বসে থাকেন তিনি। কিন্তু তখনই তাঁর এক বন্ধু তাঁকে ফোনে এই দারুণ খবরটি জানান। যা শুনে রীতিমতো কেঁদে ফেলেন তিনি। আর এভাবেই বিচারক হয়ে স্বপ্নপূরণও করে ফেলেন কমলেশ।