বাংলা হান্ট ডেস্কঃ স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনও স্থাবর সম্পত্তির ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল রেজিস্ট্রি করা মানেই সেই সম্পত্তির মালিকানা নিশ্চিত নয়। এই রেজিস্ট্রেশন কেবলমাত্র একটি লেনদেনের সরকারি রেকর্ড, মালিকানার চূড়ান্ত প্রমাণ নয়।
বিচারপতি পি.এস. নরসিমহা এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর দুই সদস্যের বেঞ্চ এই গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয়। মামলাটি দায়ের হয়েছিল পাটনা হাইকোর্টের এক রায়ের বিরুদ্ধে, যেখানে বিহার রেজিস্ট্রেশন রুলস, ২০০৮-এর কিছু সংশোধিত নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।
রেজিস্ট্রেশন আর মালিকানা, দুই আলাদা জিনিস, বলল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বেঞ্চ স্পষ্ট করেছে যে, ভারতের আইনি ব্যবস্থায় মালিকানা ও রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই একটি পার্থক্য রয়েছে। এই প্রসঙ্গে আদালতের জানায় – ট্রান্সফার অফ প্রপার্টি অ্যাক্ট স্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচার মূল আইনি কাঠামো প্রদান করে। স্ট্যাম্প অ্যাক্ট রেজিস্ট্রেশনের আগে সম্পত্তির উপর কর আরোপের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে। আর রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট কেবলমাত্র সেই লেনদেনের রেকর্ড রাখে।
বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, “রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করে, টাইটেলের নয়। এই পার্থক্যটিই আমাদের অনুমানমূলক টাইটেলিং সিস্টেমের ভিত্তি।” আদালত আরও জানায়, রেজিস্ট্রেশন মালিকানার চূড়ান্ত প্রমাণ নয়, বরং কেবল অনুমানমূলক প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যায়।
বিহার রেজিস্ট্রেশন রুলস নিয়ে বিতর্ক
২০১৯ সালে বিহার সরকার বিহার রেজিস্ট্রেশন রুলসে সংশোধন আনে। সেখানে দুটি নতুন উপ-বিধি (xvii এবং xviii) যুক্ত হয়, যেখানে বলা হয় বিক্রেতার নামে মিউটেশন (mutation) না থাকলে দলিল রেজিস্ট্রি করা যাবে না। রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষকে এই ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এই বিধিগুলির বিরুদ্ধেই মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)।
সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) জানিয়েছে, মিউটেশন প্রক্রিয়া এবং সার্ভে-সেটেলমেন্ট সম্পূর্ণ না হওয়ায় অনেক সময় বড় ব্যবধান তৈরি হয়। এই অবস্থায় জমাবন্দি বা হোল্ডিং অ্যালটমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন আটকে রাখা বেআইনি। বেঞ্চের মতে, এই ধরনের নিয়ম সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের অধিকার ও স্বাধীনতার পরিপন্থী। কারণ এটি আসলে নাগরিককে “সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত” করার শামিল।তাই আদালত বিহার রেজিস্ট্রেশন রুলস-এর উপ-বিধি ১৯ (xvii) এবং (xviii)-কে স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনি বলে ঘোষণা করে বাতিল করে দেয়।

আরও পড়ুনঃ একসঙ্গে ২৩,১৪৫ প্রাথমিক শিক্ষক বদলি, বড় পদক্ষেপ রাজ্যের
আদালত (Supreme Court) পরামর্শ দিয়েছে, একজন সম্ভাব্য ক্রেতাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। সম্পত্তির কমপক্ষে ৩০ বছরের মালিকানার ইতিহাস যাচাই করতে হবে, এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে ‘নো এনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট’ সংগ্রহ করতে হবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সম্পত্তিটি কোনও বন্ধক বা আইনি দায় থেকে মুক্ত।












