বাংলা হান্ট ডেস্কঃ স্ত্রীয়ের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তথা পরকীয়ার (Adultery) জেরে জন্ম নেওয়া সন্তানের আইনত বৈধ বাবা হবেন তাঁর স্বামীই! সম্প্রতি একটি মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকাকালীন কোনও স্ত্রী যদি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং সেই সম্পর্ক থেকে তাঁর সন্তান হয়, তাহলে সেই সন্তানের আইনত বৈধ বাবা হবেন স্বামীই। কেরালার একটি মামলার পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
নজিরবিহীন রায় দিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)
জানা যাচ্ছে, ২০০১ সালে জন্ম হয় মিলান জোসেফের। সেই সময় রাজু কুরিয়ান নামের একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন মিলানের মা। পরবর্তীতে তাঁদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর ২০০৭ সালে কোচিন পুরসভায় গিয়ে ছেলের বাবার নাম পরিবর্তনের আবেদন জানান মিলানের মা। তিনি দাবি করেন, রাজু কুরিয়ান নন, বরং ইভান রথিরাম আসলে মিলানের জন্মদাতা বাবা।
কোচিন পুরসভার তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, আদালতের নির্দেশ ছাড়া মিলানের বাবার নাম বদল করা যাবে না। এরপর সেই জল গড়ায় আদালত অবধি। মিলানের মা ফার্স্ট অ্যাডিশনাল মুন্সিফ কোর্টে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। মহিলা আদালতে আবেদন করেন, যেন রথিরামকে মিলানের বাবা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং মিলানকে নিজের পরিচয় দেন। সেই সঙ্গেই ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড ১৯৭৩-এর ১২৫ নং ধারা অনুযায়ী রথিরামের থেকে খোরপোষ দাবি করা হয়।
শেষমেশ ২০০৯ সালে আদালত জানিয়ে দেয়, মিলানের জন্মের সময় তাঁর মা যেহেতু রাজু কুরিয়ানের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে ছিলেন, সেই কারণে মিলানের আইনত বৈধ বাবা হলেন রাজুই। পরবর্তীতে সাব জজ কোর্ট এবং কেরালা হাইকোর্টও ওই রায় বহাল রাখে। পরবর্তীতে বেশ কিছু আইনি টানাপড়েনের পর জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) অবধি।
এবার ভারতীয় প্রমাণ আইন, ১৮৭২-এর ১১২ নং ধারা অনুযায়ী শীর্ষ আদালতও জানিয়ে দিল, বৈধ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকাকালীন জন্ম নেওয়া সন্তানের আইনত বৈধ পিতা হলেন মহিলার স্বামী। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ‘এমনকি ডিএনএ প্রমাণ অন্য কিছু নির্দেশ করলেও পিতৃত্বের পরিচয় দেওয়ার সময় সামাজিক বৈধতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কোনও পুরুষ যদি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে নন অ্যাকসেস প্রমাণ করতে পারে, তাহলেই শিশুর পিতৃত্ব অস্বীকার করতে পারবেন’।
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘একজন সন্তানের জন্মদাতা পিতা থাকতেই পারে। কিন্তু স্বামীকেই বৈধ বাবা হিসেবে স্বীকৃত দেয় আইন’। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও সন্তানের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে অকারণ প্রশ্ন ওঠা আটকাতেই এই নির্দেশ। এক্ষেত্রে কোনও স্বামী যদি সন্তানের সন্তানের দায়িত্ব নিতে অথবা নিজের পিতৃত্ব অস্বীকার করতে চান, তাহলে তাঁকে স্ত্রীয়ের সঙ্গে ‘নো কন্ট্যাক্ট’ প্রমাণ করতে হবে। ‘নো কন্ট্যাক্ট’এর সংজ্ঞা দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিকে প্রমাণ করতে হবে তাঁর স্ত্রীয়ের সঙ্গে কোনও শারীরিক সম্পর্ক নেই।
জানা যাচ্ছে, এই নিয়ে চূড়ান্ত রায়ে ৪টি পর্যবেক্ষণ পেশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। ১) বৈধ পিতৃত্ব নির্ধারণ করে যদি না নন অ্যাকসেসের পরিষ্কার প্রমাণ না পাওয়া যায়, ২) কেবলমাত্র ডিএনএ প্রমাণই বৈধতার আইনি নিয়মকে অগ্রাহ্য করতে পারে না, ৩) রথিরামের কাছে মিলান জোসেফের মায়ের রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানানো অর্থহীন। কারণ মিলানের বৈধ বাবা হলেন রাজু কুরিয়ান, এবং ৪) ২০১১ সালের রায়ই চূড়ান্ত। এই নিয়ে আর কোনও আপিল হবে না।