বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বারবার স্বপ্ন ভাঙছে দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের। মাসের পর মাস EMI দিয়ে যাওয়ার পরেও মাথার উপর ছাদের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না অসংখ্য মানুষ। বহু রিয়্যাল এস্টেট প্রকল্প মাঝপথে থমকে রয়েছে। এর জেরেই নাজেহাল সাধারণ মানুষ। এবার এই ভোগান্তির বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)।
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের ডিভিশন বেঞ্চ এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট জানিয়েছে যে, সরকার নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। ‘বাসস্থানের অধিকার’ কেবল একটি চুক্তির বিষয় নয়, বরং এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কারণ, বাসস্থান জীবনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাই গৃহ-ক্রেতাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতারমধ্যে পরে।
অসম্পূর্ণ প্রকল্পে অর্থ সহায়তা ও নজরদারির নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে মাঝপথে আটকে থাকা প্রকল্পগুলিকে নতুন করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। প্রয়োজনে প্রকল্পগুলি অধিগ্রহণ করে শেষ করার কথাও বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাব দিয়েছে, কেন্দ্র চাইলে ‘ন্যাশনাল অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড’-এর ধাঁচে একটি নতুন সংস্থা তৈরি করতে পারে। আবার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (PPP) মডেলেও সংস্থা গড়ে তোলা সম্ভব, যার কাজ হবে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্প শনাক্ত করা, অধিগ্রহণ করা এবং অবশেষে ক্রেতাদের হাতে সমাপ্ত বাড়ি তুলে দেওয়া।
এছাড়া বেঞ্চ জানিয়েছে, এসডব্লিউএএমআইএইচ (Special Window for Affordable and Mid Income Housing Investment) তহবিলের পরিসর বাড়ানো যেতে পারে। কিংবা NARCL-এর অধীনে বিশেষ পুনরুজ্জীবন তহবিল তৈরি করা যেতে পারে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ পৌঁছে দিয়ে প্রকল্প শেষ করা যায়। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এও বলেছে, শুধু অর্থ সহায়তা নয়, প্রকল্পে অর্থের অপব্যবহার ঠেকাতেও নজরদারি জরুরি। এজন্য নিয়ন্ত্রক মহাপরিদর্শক (CAG)-এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পারফরম্যান্স অডিট চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এতে সরকারের উদ্যোগে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা দু’টোই বাড়বে।
এদিকে কলকাতার এক আবাসন সংস্থা জানিয়েছে, দেশ জুড়ে বহু প্রকল্প ইতিমধ্যেই দেউলিয়া হয়ে আছে, ফলে লক্ষ লক্ষ পরিবার তাদের স্বপ্নের ঘর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, “এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপের জন্য নির্দিষ্ট কোনও আইন নেই। তবে রাজ্য চাইলে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর আইনে বদল এনে পুরসভাগুলিকে দায়িত্ব দিতে পারে।”
কি বলছে নবান্ন?
রাজ্য সরকারের এক সূত্র বলছে, ইতিমধ্যেই আবাসন দপ্তরের অধীনে একটি কমিটি এই বিষয়ে কাজ করছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল রিয়্যাল এস্টেট অথরিটির (WB RERA) কাছে অভিযোগ জানালে সুরাহা মেলে। আবার কেউ বলছে, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হলে সুবিচার পাওয়ার সুযোগও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।
আইন দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “সবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এসেছে। দেশের সব রাজ্য সরকারকেই এটি পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ করতে হবে। তাই বিস্তারিত না জেনে এখনই কিছু বলা যাবে না।”
আরও পড়ুনঃ SIR ঘিরে বিতর্কের মাঝেই ভোটের দিন ঘোষণা বিহারে, বাংলায় কবে?
উল্লেখিত প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) স্পষ্ট বার্তা, বাসস্থান কোনও পণ্য নয়, বরং জীবনযাপনের মৌলিক শর্ত। দেশের মধ্যবিত্ত পরিবার যাতে আর প্রতারণার শিকার না হয়, তার দায় সরকারের। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।