বাংলাহান্ট ডেস্ক: ওডিশার গঞ্জাম জেলার এক ছোট গ্রাম কুকুড়াহান্ডির বাসিন্দা সুরেন্দ্র নাথ আজ রাজ্যের এক সফল (Success Story) উদ্যোক্তা। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের পথ সহজ ছিল না। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে তিনি ফিরেছিলেন নিজের গ্রামে—একটা নতুন স্বপ্ন নিয়ে। ২০১৩ সালে ভূবনেশ্বরের সিলিকন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিক্সে বি.টেক সম্পূর্ণ করার পর সুরেন্দ্র এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজের কোয়ালিটি ডিভিশনে চাকরি পান। তখন তাঁর পোস্টিং ছিল পুনেতে। সেখানেই মহারাষ্ট্রের শক্তিশালী দুগ্ধ সমবায় ব্যবস্থার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। কৃষকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বুঝতে পারেন—ভারত বিশ্বের সর্বাধিক দুধ উৎপাদনকারী দেশ হলেও গ্রামীণ এলাকায় বিশুদ্ধ দুধের ধারাবাহিক যোগানে এক বড় ঘাটতি রয়েছে।
সুরেন্দ্রর সফলতার কাহিনি (Success Story):
এই উপলব্ধিই বদলে দেয় তাঁর জীবন। ২০১৬ সালে মাসে ২৮ হাজার টাকার চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফেরেন সুরেন্দ্র। শুরু করেন দুগ্ধ ব্যবসা নিয়ে গবেষণা। নিজের জেলায় দুধের চাহিদা এবং সরবরাহের ফারাক দেখে সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা হওয়ার। ২০১৭ সালে মাত্র ৬ লক্ষ টাকার প্রাথমিক পুঁজি এবং অবসরপ্রাপ্ত বাবা এ. বিদ্যাধরের সহায়তায় গড়ে তোলেন ‘বৈশালী ডেয়ারি প্রাইভেট লিমিটেড’। শুরুটা ছিল কঠিন—মাত্র দুই কৃষক দুধ দিতে রাজি হন। নিজে হাতে দুইয়ে, মেশিনে বোতল ভরে তিনি নিজে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন ৩৬ টাকা লিটার দরে। দেড় বছর পর তাঁর মাসিক মুনাফা ছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা (Success Story)।
আরও পড়ুন:চাবাহার বন্দর থেকে শুরু করে ওয়াঘা বর্ডার… ভারত-আফগানিস্তানের মধ্যে কোন কোন বিষয়ে হল আলোচনা?
কিন্তু সুরেন্দ্র হার মানেননি। ২০১৯ সালে ২৪ লক্ষ টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে স্থাপন করেন আধুনিক চিলিং, ধোয়া ও প্যাকেজিং সরঞ্জাম। ২৫ জন কৃষকের কাছ থেকে প্রতিদিন ৪০০ লিটার দুধ সংগ্রহ শুরু হয়। সেই বছরেই তাঁর বার্ষিক টার্নওভার পৌঁছয় ৭০ লক্ষ টাকায়। পরের দুই বছরে ব্যবসায় গতি বাড়ে। ২০২১-২২ সালে রাজ্যের এমএসএমই দপ্তরে নিবন্ধন করেন, ৬০ জন কৃষকের কাছ থেকে প্রতিদিন ৭০০ লিটার দুধ সংগ্রহ করে টার্নওভার পৌঁছয় ২ কোটিতে (Success Story)।
বর্তমানে বৈশালী ডেয়ারি তার পূর্ণ ২,০০০ লিটার উৎপাদন ক্ষমতায় কাজ করছে। ২৫০ জন কৃষক প্রতিদিন দুধ সরবরাহ করেন। সংগৃহীত দুধের প্রায় অর্ধেক ব্যবহার হয় ‘অনন্ত সাগর’ ব্র্যান্ডের অধীনে তৈরি ১২ রকমের দুধজাত পণ্য—যেমন ছেনা পোড়া, দই, পেড়া, রসগোল্লা ও গুলাব জামুনে। এই ব্র্যান্ডের দুধ উচ্চমানসম্পন্ন, যাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ পুষ্টিগুণ (Success Story)।
আরও পড়ুন:দীপাবলির আগেই ধামাকা! একলাফে ৮ শতাংশ DA বাড়ছে সরকারি কর্মীদের, তবে সবাই পাবেন না
আজ সুরেন্দ্রর উদ্যোগে ৩৫ জন কর্মী কাজ করছেন দুধ সংগ্রহ, প্যাকেজিং ও বিপণনে। তাঁর লক্ষ্য এখন গঞ্জামের বাইরে গজপতি, কোড়াপুট, কালাহান্ডি ও কন্ধমাল জেলায় সম্প্রসারণ। সম্প্রতি তিনি ৭০ লক্ষ টাকার ব্যাংক ঋণ পেয়েছেন, যার মধ্যে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নীতির আওতায় ৩৫% ভর্তুকি রয়েছে। তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা কুকুড়াহান্ডিতে চার একর জমিতে এক কোটি টাকায় একটি আধুনিক ফার্ম স্থাপন করা, যেখানে থাকবে ৩৫০টি স্বদেশি জাতের গরু (Success Story)।
ইঞ্জিনিয়ার থেকে সফল দুগ্ধ উদ্যোক্তা—সুরেন্দ্র নাথের এই যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং আত্মনির্ভরতা ও গ্রামীণ উন্নয়নের এক অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত (Success Story)।