বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অমৃতা সিনহার (Justice Amrita Sinha)।স্বামী প্রতাপচন্দ্র দে-র বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। শুক্রবার এই মাললায় শীর্ষ আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য। পাশাপাশি ওই মামলার শুনানিতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এফআইআর করা যাবে না বলেও রাজ্যকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
শুক্রবার এই মামলাটির শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চে। রাজ্যের করা মামলা খারিজ করে দেয় দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এফআইআর দায়ের নিয়ে রাজনীতি করবেন না। ইতিমধ্যেই চার্জশিট দাখিল হয়ে গিয়েছে, আইনকে আইনের পথে চলতে দিন।’’
প্রসঙ্গত, জমি সংক্রান্ত এক মামলায় নাম জড়িয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামী প্রতাপচন্দ্র দের। পেশায় প্রতাপ আইনজীবী। একটি পৈতৃক জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ৬৪ বছরের এক বিধবা মহিলার সঙ্গে তার কিছু আত্মীয়ের বিরোধ শুরু হয়। ঝামেলার জেরে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তার দাদা এবং আত্মীয়রা। সেই ঘটনার প্রমাণও সিসিটিভিতে রয়েছে। এরপরই এই ইস্যুতে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। নিজের দাদা ও তার কিছু আত্মীয়দের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ফৌজদারি মামলা করেছিলেন বিধবা বৃদ্ধা মহিলা। সেই মামলায় বিবাদী পক্ষের হয়ে সওয়াল জবাব করছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামী।
অভিযোগ ওঠে, নিজের প্রভাব খাঁটিয়ে নানাভাবে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন কলকাতা হাই কোর্টের মহিলা বিচারপতির স্বামী। এমনকি বিচারপতির বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন ওই মহিলা ও তার মেয়ে। এরপরই তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। যাতে আইনজীবী বা তার বিচারপতি স্ত্রীর প্রভাব ছাড়াই দু’টি ফৌজদারি অভিযোগের যাতে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়, সেই জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান তারা।
এদিকে শীর্ষ আদালতে করা আবেদনে জানানো হয়, ওই দুই মামলার প্রাথমিক তদন্তে এক জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ারও হয়েছেন। তবে তার পরও তদন্তে বাধা দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে। আদালতে দেওয়া হলফনামায় জানানো হয়, ওই মামলায় তদন্তে থাকা অফিসারকে ডেকে নাকি এক বার ভর্ৎসনাও করেছেন বিচারপতি। ওই দু’টি দেওয়ানি মামলায় কেন ফৌজদারি মামলার তদন্ত হচ্ছে? এই প্রশ্নও তোলা হয়।
গত বছর নভেম্বর মাসে সমস্ত বিষয় শুনে এই ফৌজদারি মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতেই রাখে সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকেও মুখবন্ধ খামে এই তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চ৷
সেই সময় সিআইডিকে ভয় না পেয়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। পরে অবশ্য এই মামলায় কোনও বাড়তি পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে গত ডিসেম্বর মাসে আদালত জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ। তারপরই বিচারপতির স্বামীকে একাধিকবার তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি।
আরও পড়ুন: শেষবেলায় মাস্টারস্ট্রোক BJP-র! মিঠুনের হাত ধরে তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণির স্ত্রী যোগ দিলেন পদ্মে
এই মামলায় অভিযোগকারী বৃদ্ধার আর্জি ছিল বিচারপতি সিনহা এবং আইনজীবী স্বামীর ওই কাজের জন্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। সংশ্লিষ্ট মামলাটিতে হঠাৎই সক্রিয় হয়ে ওঠে রাজ্য। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে এফআইআরও রুজু করা হয়। তদন্তের নামে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সিআইডির বিরুদ্ধে। একাধিকবার বিচারপতির স্বামীকে ডেকে হেনস্থাও করা হয় বলে অভিযোগ।
দু’পক্ষের শুনানি শেষে শুক্রবার সেই মামলায় খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এফআইআর করা হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। যদিও মামলাটিতে পুলিশের স্ট্যাটাস রিপোর্ট এবং চার্জশিট নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি সর্বোচ্চ আদালত।