বাংলাহান্ট ডেস্ক: আত্মঘাতী হয়েছেন প্রখ্যাত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত (sushant singh rajput)। নিজের বান্দ্রার বাড়িতে পাওয়া গিয়েছে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ। বাড়ির পরিচারক প্রথম দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। প্রথম ছবি কাই পোছে।
আরও পড়ুনঃ ‘আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়, লড়াই করে বাঁচতে হবে জীবনে’, ‘ছিছোঁড়ে’তে বলেছিলেন খোদ সুশান্ত সিং রাজপুত
কাই পো ছে ছবির হাত ধরে বলিউডে প্রবেশ করেন সুশান্ত। তারপর বেশ কয়েকটি হিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিটি তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়।
১৯৮৬ সালে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মালডিহাতে জন্ম সুশান্তের। প্রথমে পাটনার সেন্ট কারেনস হাই স্কুল ও পরে দিল্লির কুলাচি হংসরাজ মডেল স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। দিল্লি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে পড়েন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন সুশান্ত। AIEEE পরীক্ষায় সারা ভারতের মধ্যে সপ্তম স্থানে ছিলেন তিনি। পদার্থবিদ্যায় জাতীয় অলিম্পিয়াডও জেতেন অভিনেতা। কিন্তু কলেজের তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীনই তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন অভিনয় জগতে নিজের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য।
কলেজে থাকাকালীনই নাচের প্রতি আগ্রহ জন্মায় সুশান্তের। শ্যামক দাভর তাঁর নাচের প্রতিভা দেখে ২০০৬ সালে কমনওয়েলথ গেমস ও ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে নাচের সুযোগ করে দেন। অভিনয় জগতে নিজের কেরিয়ার বানানোর জন্য থিয়েটার ক্লাসে ভর্তি হন সুশান্ত। সেখানেই তাঁর ওপর চোখ পড়ে বালাজি টেলিফিল্মসের কাস্টিং টিমের। ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ ধারাবাহিকে প্রীত চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁকে। এরপরেই আসে তাঁর প্রথম ব্রেক। ‘পবিত্র রিশতা’ ধারাবাহিকে মানভ দেশমুখের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান সুশান্ত। এরপরেই ঘুরে যায় তাঁর কেরিয়ারের অভিমুখ।
২০১৩ সালে ‘কাই পো ছে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন সুশান্ত। বক্স অফিসে ব্যাপক হিট হয় ছবিটি। এরপর একে একে ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’, ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ধোনির চরিত্রে অসাধারন মানিয়েছিল সুশান্তকে। তাঁর শেষ ছবি ‘ছিছোঁড়ে’।
আরও পড়ুনঃ অভিনয় ছাড়াও পড়াশোনায় দুর্দান্ত ছিলেন সুশান্ত, এই পরীক্ষায় হাসিল করেছিলেন গোটা ভারতে সপ্তম স্থান
তবে তাঁর শেষ কয়েকটি ছবি বক্স অফিসে তেমন সফলতা পায়নি। তাঁর অভিনীত শেষ ওয়েব সিরিজ ড্রাইভ মুখ থুবড়ে পড়ে বক্স অফিসে। সেই কারনে অবসাদে ভুগছিলেন সুশান্ত। তাঁর চিকিৎসা চলছিল বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
সুশান্তের এই আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। তাঁর সহকর্মী থেকে অনুরাগী সবারই মন ভারাক্রান্ত হয়ে রয়েছে। সুশান্তের শেষ ওয়েব সিরিজ ‘ড্রাইভ’এ তাঁর বিপরীতে ছিলেন জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ। সহঅভিনেতার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তিনি। সুশান্তের সঙ্গে নিজের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘সুশ… আমি খুব দুঃখিত’।
https://www.instagram.com/p/CBaX1QfH6V6/?igshid=16n7lzxcugwvj
একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন জ্যাকলিন যেখানে দেখা গিয়েছে প্রাণোচ্ছল সুশান্তকে। গ্রিনরুমে আড্ডা থেকে শুরু করে স্টেজে নাচের প্র্যাকটিস সবসময়েই মুখে হাসি লেগেছিল অভিনেতার। ভিডিওটি শেয়ার করে জ্যাকলিন লিখেছেন, ‘আমি সবসময় তোমাকে এভাবেই মনে রাখব। পরিশ্রমী, যত্নবান, বুদ্ধিমান ও আবেগপূর্ণ’।
https://www.instagram.com/p/CBaaLOHHcEF/?igshid=ytf6r8oa7bv4
‘পিকে’ ছবিতে অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সুশান্ত। সেই ছবির কিছু দৃশ্য পোস্ট করে শোকজ্ঞাপন করেছেন অনুষ্কা। লিখেছেন, ‘সুশান্ত তুমি খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলে। আমার এটা ভেবে খারাপ লাগছে আমরা এমন একটা পরিবেশে বাস করি যেখানে তোমার সমস্যাগুলো সমাধান করার কেউ ছিল না। তোমার আত্মার শান্তি কামনা করি।’
https://www.instagram.com/p/CBaaaKZpybE/?igshid=1vuwpjhsu7fpn
জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন অভিনেতা। এদিন তাঁর বন্ধুরা তাঁর বাড়িতে এলে দরজা খোলেননি সুশান্ত। শেষে বন্ধুরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। মনে করা হচ্ছে, অবসাদের কারনেই এমন চরম পথ বেছে নিয়েছেন সুশান্ত। উল্লেখ্য, মাত্র কিছুদিন আগেই আত্মহত্যা করেছেন তাঁর প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা।
প্রসঙ্গত, প্রকাশ্যে এসেছে সুশান্তের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অভিনেতার মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। ড. আর এন কুপার মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে যে ডাক্তার সুশান্তের ময়নাতদন্ত করেছেন তিনি জানান, তাঁর শরীরে কোনও ড্রাগ বা বিষ রয়েছে কীনা তার পরীক্ষা জেজে হাসপাতালে হবে।
অপরদিকে জানা গিয়েছে মুম্বই ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের একটি দল সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তে নেমেছে। অভিনেতার ফ্ল্যাটের চারপাশ তদন্ত করে দেখছে তারা। সুশান্তের বাড়ির পরিচারিকারা জানান, সকালে ফলের রস খেয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছিলেন তিনি।