বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা। বুধবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির তরফে বড় ঘোষণা করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। যুবভারতী কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া সকল দর্শকের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে বিজেপি।
গ্রেপ্তার হওয়া দর্শকদের পাশে বিজেপি
সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) জানান, যুবভারতী কাণ্ডে যাঁদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাঁদের সবাইকে সম্পূর্ণ আইনি সহায়তা দেবে বিজেপি। দর্শকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর ও গ্রেপ্তারির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেন তিনি। শুভেন্দুর বলেন, “ধৃতদের সম্পূর্ণ লিগাল সাপোর্ট দেবে বিজেপি। আমাদের আইনজীবীরা এই তথাকথিত ভুয়ো এফআইআরগুলিতে স্থগিতাদেশ চাইবেন। জামিন করানো থেকে শুরু করে আইনি লড়াই, সব দিকেই বিজেপি পাশে থাকবে। এ নিয়ে আমরা একটি জনস্বার্থ মামলাও করেছি।”
মেসি কাণ্ডে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari)।
মেসি বিতর্ক নিয়ে রাজ্য সরকার ও ক্রীড়ামন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও সরব হন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর অভিযোগ, ক্রীড়ামন্ত্রী পদত্যাগ করে বিষয়টি চাপা দিতে চাইছেন। শুভেন্দু বলেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা কোনও অপরাধ করেননি। তাঁরা টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছেন, অনেকেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত ও উচ্চশিক্ষিত। অথচ যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেই। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “মেসিকে প্রথম ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম কে দিয়েছে? এতে পুরো দলটাই জড়িত।”
এর মধ্যেই যুবভারতীতে ভাঙচুরের ঘটনায় আরও এক জনকে গ্রেপ্তার করেছে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ। ধৃতের নাম রূপক মণ্ডল। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, রূপকের বাড়ি ইএম বাইপাস সংলগ্ন চিংড়িঘাটা এলাকায়। এই নিয়ে যুবভারতী কাণ্ডে মোট গ্রেপ্তারির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬।বুধবার সকালে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তদন্তকারী দলের চার জন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক গোটা এলাকা ঘুরে দেখেন এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।
কীভাবে শুরু হয়েছিল অশান্তি?
ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসির কলকাতা সফরকে ঘিরেই এই উত্তেজনার সূত্রপাত। গত শনিবার যুবভারতীতে চরম বিশৃঙ্খলা ও তাণ্ডবের ছবি সামনে আসে। অভিযোগ, চড়া দামে টিকিট কেটেও বহু দর্শক মেসিকে ঠিকমতো দেখতে পাননি। মেসি, সুয়ারেজ় ও দে পল প্রায় ২০ মিনিট মাঠে ছিলেন। সেই সময় তাঁদের ঘিরে মাঠে বড় জটলা তৈরি হয়, যেখানে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও উপস্থিত ছিলেন। এই জটলার কারণে গ্যালারির একাংশ থেকে দর্শকরা মেসিদের প্রায় দেখতেই পাননি।
স্টেডিয়ামে ভাঙচুর ও স্বতঃপ্রণোদিত মামলা
মেসিরা স্টেডিয়াম ছাড়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে গ্যালারিতে হোর্ডিং ছেঁড়া শুরু হয়, এরপর বোতল ছোড়া হয় মাঠের দিকে। ভাঙচুর করা হয় চেয়ার, ভেঙে ফেলা হয় ফেন্সিং। শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ জনতা মাঠে নেমে পড়ে। এই ঘটনার পর স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে বিধাননগর পুলিশ।

শমীক ভট্টাচার্যের কড়া মন্তব্য
এই ইস্যুতে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) সঙ্গে সুর চড়ান বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও। পুলিশের ভূমিকা ও রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শোনা যায় তাঁর গলায়। শমীকের অভিযোগ, “আজ যেসব বাচ্চা ছেলেদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছে। তারা যোগ্য দর্শক, অনেকেই সরকারি চাকরি করেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করেন, উচ্চশিক্ষিত। অথচ যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক লুঠ করেছে, তারা কোথায়? মেসিকে প্রথম ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম কে দিয়েছে?”












