বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবস্থা নিয়ে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্টে তিনি দাবি করেন, গত ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপশাসনে পশ্চিমবঙ্গ আজ শিল্পহীন, কর্মহীন এবং ঋণে জর্জরিত। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের মোট ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৭১ লক্ষ কোটি টাকা, যা দেশজুড়ে সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে এনেছে।
কী কী নিয়ে অভিযোগ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari)?
শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) অভিযোগ, ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির চাপে রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে আপস হয়েছে। অনুপ্রবেশ বেড়েছে, আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে, সাধারণ মানুষ ভয়ের পরিবেশে দিন কাটাচ্ছে। এছাড়া নিয়োগ দুর্নীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও এদিন অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী।
শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) বলেন, SSC, PSC এবং WBCS নিয়োগে দুর্নীতির জেরে যোগ্য প্রার্থীরা বছরের পর বছর আদালতের দ্বারে ঘুরছেন। OBC সংরক্ষণ বিতর্কে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ২০১৪ সালের পর কলেজ ভর্তি প্রক্রিয়া ভেঙে পড়ে। প্রতি বছর ৭-৮ হাজার স্কুল বন্ধ হচ্ছে, পড়াশোনার জন্য বাংলার মেধাবীরা ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।
কাগজে-কলমে উন্নয়ন থাকলেও বাস্তবে হাসপাতালে ডাক্তার, কর্মী ও পরিকাঠামোর অভাব। ছোট চিকিৎসার জন্যও কলকাতায় রেফার। দালালচক্র সক্রিয়, আর কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প বাতিল করে চালু করা হয়েছে ব্যর্থ ‘স্বাস্থ্য সাথী’, এমনও অভিযোগ করেন শুভেন্দু।
জনমোহিনী প্রকল্প ও আর্থিক চাপ
জনমোহিনী প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ তুলে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) বলেন, ভোটের স্বার্থে ২০২৩-২৬ সময়কালে জনমোহিনী প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৭ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। অথচ রাস্তা, সেচ, বিদ্যুৎ, পুলিশ, সব ক্ষেত্রেই বরাদ্দ জাতীয় গড়ের অনেক নিচে।
আরে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) বলেন, ২০১১-১২ সালে যেখানে রাজ্যের ঋণ ছিল ২.০৭ লক্ষ কোটি, সেখানে আজ তা ৭.৭১ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে, বৃদ্ধি ৩০৫%। মাথাপিছু ঋণ বেড়ে ৭৬,৭৬৬ টাকা। রাজ্যের আয়ের ৩৮% চলে যাচ্ছে শুধু ঋণ শোধে। আজ বাংলায় জন্মানো প্রতিটি শিশুর ঘাড়ে জন্মেই ঋণের বোঝা, এই দাবি শুভেন্দুর।
শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) আরও জানান, IEM ফাইলিংয়ে বাংলার অংশ মাত্র ২-৩%। FDI শেয়ার ০.৬৭%। প্রায় ৬,৬৮৮টি সংস্থা রাজ্য ছেড়েছে। JSW, Wipro, Infosys-এর মতো প্রকল্প ঝুলে। নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নেই, জমি বরাদ্দে দীর্ঘসূত্রতা ও ‘কাটমানি’র অভিযোগ।
বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের বাস্তবতা
বঙ্গবাণীকে সম্মেলন নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) জানান, ২০১৫-২৪ পর্যন্ত ২২৩ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন মাত্র ৩%। MoU-র তথ্য প্রকাশ্যে নেই, আন্তর্জাতিক সফরে বিপুল খরচ হলেও প্রকল্প নেই।
CAG রিপোর্ট ও রাজস্ব সংকট
CAG রিপোর্ট ও রাজস্ব সংক্রান্ত আর্থিক গরমিলার কথাও এদিন তুলে ধরেন শুভেন্দু (Suvendu Adhikari)। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, CAG রিপোর্টে আর্থিক গরমিল, বাজেট বহির্ভূত ঋণ, SPSE-তে হিসেবের অনিয়ম ধরা পড়েছে। কর ও কর-বহির্ভূত আয়ে পশ্চিমবঙ্গ দেশের তলানিতে। মোট আয়ের ৫৬% কেন্দ্রের কর বণ্টন ও অনুদানের উপর নির্ভরশীল রাজ্য।
GDP ও মাথাপিছু আয়ের পতন
১৯৬০-৬১ সালে দেশের GDP-তে বাংলার অংশ ছিল ১০.৫%, এখন নেমে ৫.৫%। মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের ১২৭.৫% থেকে নেমে ৮৩.৭%। শিল্প ও উৎপাদনে বৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের থেকে অনেক কম।
ডিএ ও কর্মচারী সংকট
এছাড়া রাজ্য কর্মচারীরা কেন্দ্রের তুলনায় ৩৭% কম ডিএ পান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ৪১,৮৭১ কোটি টাকা বকেয়া, এই অভিযোগও তুলেছেন শুভেন্দু।

আরও পড়ুনঃ মমতার বিপরীতে কে হবেন BJP-র মুখ? ভোটের আগেই বড় মন্তব্য শমীকের
শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) দাবি, শিল্প ধ্বংস, লাগামছাড়া ঋণ, দুর্নীতি ও ব্যর্থ শাসনের ফলে পশ্চিমবঙ্গ আজ দেউলিয়ার পথে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে তিনি রাষ্ট্রবাদী, সুশাসন ও উন্নয়নমুখী সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে স্লোগান দেন – “বাঁচতে চাই-বিজেপি তাই।”












